মে ২, ২০২৪

চলতি বছরের ডিসেম্বরে দেশে আসবে ভারতের শিল্পগোষ্ঠী আদানি গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ। প্রতিষ্ঠানটি ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা এলাকায় একটি থার্মাল পাওয়ার সেন্টার তৈরি করেছে। ওই সেন্টার থেকে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডকে (পিডিবি) বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে এ বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোপুরি উৎপাদন শুরু করলে জাতীয় গ্রিডে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করবে। এরই মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। সঞ্চালন লাইনের কাজও প্রায় শেষের দিকে।

যথাসময়ে বিদ্যুৎ আনার বিষয়টি নিশ্চিত করে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদানি পাওয়ারের সঙ্গে পিজিসিবির যোগাযোগ রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরুর বিষয়ে আমরা তৎপর। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত আমাদের সঞ্চালন লাইনের কাজও শেষ। উৎপাদন শুরুর পর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যতটুকু বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে আমরা তা সরবরাহ করতে পারব।

দেশের বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার লক্ষ্যে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট সই হয় ২০১১ সালে। ওই চুক্তির আওতায় ২০১৫ সালের ১১ আগস্ট ভারতের আদানি পাওয়ারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর আদানির সঙ্গে ক্রয়চুক্তি সই হয়।

ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডা জেলায় ৮০০x২ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করে আদানি পাওয়ার। ১৪৭ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বগুড়া পর্যন্ত এ বিদ্যুৎ আনা হবে। সঞ্চালন লাইনের ৯০ কিলোমিটার হচ্ছে ভারতে। বাংলাদেশে বসছে ১৪৫ কিলোমিটার লাইন। বিদ্যুৎ আনতে দুই ধাপে নির্মিত হচ্ছে সঞ্চালন লাইন।

পিজিসিবির তথ্য অনুযায়ী, সীমান্ত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ৪০০ কিলোভোল্টের (কেভি) একটি সঞ্চালন লাইন বসানো হয়েছে। ব্যয় হয়েছে ২২৬ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে এ লাইনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে নিতে সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ এখনও চলমান। বড়পুকুরিয়া থেকে বগুড়া হয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর পর্যন্ত ২৬০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে তিন হাজার ৩২২ কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আদানি পাওয়ারের মালিকানাধীন অস্ট্রেলিয়ার কারমিখায়েল খনি থেকে কয়লা আনা হবে। যা উড়িষ্যার ধামরা বন্দরে খালাস হবে। সেখান থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা নেওয়া হবে তাদের নির্মিত ৭০০ কিলোমিটার রেল লাইনের মাধ্যমে।

চুক্তি অনুসারে আগামী ২৫ বছর এ কেন্দ্র থেকে এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ৮৯ পয়সা দরে আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ কিনতে সম্ভাব্য ব্যয় হবে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।

দেশে চলমান বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে আদানির বিদ্যুৎ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র মূলত কয়লাভিত্তিক। আমদানির ক্ষেত্রে মূল্য কিছুটা বেশি পড়লেও আদানির বিদ্যুৎ আসা শুরু করলে তেলভিত্তিক ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া যাবে। ফলে একদিকে অর্থনৈতিকভাবে চাপ কমে যাবে, অপরদিকে বিদ্যুতের যে ঘাটতি চলছে সেটাও কমে আসবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *