মে ৩, ২০২৪

কিছুদিন পূর্বে একটি সরকারি হাসপাতালে রোগী দেখতে গিয়ে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাথরুমের কাছাকাছি পৌঁছে বুঝতে পারি, তা সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার অনুপযোগী। তৎক্ষনাৎ হাসপাতাল ডিরেক্টর মহোদয়ের রুমে গিয়ে সরাসরি বাথরুমে প্রবেশ করি, ঝাঁ চকচকে নতুন টাইলস, উন্নত ফিটিংসের বাথরুমে কাজ সম্পন্ন করে বের হয়ে মহোদয়কে সবিনয়ে হাসিমুখে জানাই, যেহেতু তার নিয়ন্ত্রাধীন প্রতিষ্ঠানের বাথরুম ব্যবহার উপযোগী নয়, এবং যেহেতু ‘প্রতিষ্ঠান প্রধান’ হিসেবে এই ‘আবশ্যিক সেবা’ নিশ্চিত করা তার অবশ্য পালনীয় পেশাগত দায়বদ্ধতা, সেহেতু, যতদিন হাসপাতালের বাথরুমগুলো ব্যবহার উপযোগী না হবে, ততোদিন হাসপাতালে এলে, প্রকৃতির ডাক অনুভব করলে আমি তার রুমের বাথরুম ব্যবহার করবো এবং অন্যদেরও এই কাজ করতে উৎসাহিত করবো!

একথা শুনে চক্ষু চড়কগাছ করে, ক্ষানিক থ বনে গিয়ে, বিক্ষুদ্ধ মহোদয় তৎক্ষনাৎ ওয়ার্ড মাস্টার, ক্লিনার সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ডেকে এমন টাইট দিলেন, চাকরি বাঁচানোর তাগিদে দায়িত্বশীলরা ঝাঁমা দিয়ে ঘসে বাথরুম পরিষ্কার শুরু করেলো। মোটামুটি মাসখানেক ব্যবহার উপযোগী থাকলো, এরপরে যেই লাউ, সেই কদু! অথচ, এই ঘটনার পর পরিচালক মহোদয় যদি প্রতিদিন সকালে অফিস কক্ষে প্রবেশের পূর্বে সার্বিক পরিচ্ছন্নতা তদারকি করতে একেকদিন নানা প্রান্তে ঢুঁ মারতেন, সঠিক দায়িত্ব পালনে স্তুতি-পুরষ্কার আর অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্ব অবহেলার জন্য নিন্দা-শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন, তাহলেই দৃশ্যপট আমূল বদলে যেতো!

হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমাসহ প্রায় সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের একটা কমন চিত্র হচ্ছে ওয়াসরুম, বাথরুম, টয়লেট মারাত্মক নোংরা, দুর্গন্ধময় ব্যবহার অযোগ্য! বেসিন-আয়না, ট্যাপকল নষ্ট, ভাঙ্গাচোরা, উধাও! জানালা-দেয়াল-ফ্লোরের অপরিচ্ছন্ন ঘিনঘিনে দৃশ্য দেখেই বোঝা যায়, মাসেও একবার এসব দেখার বা পরিষ্কার করার কেউ নাই। অথচ প্রতিটি দপ্তরেই কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ফ্লোর ক্লিনার, সুইপার নিয়োগ করা আছে এবং তারা মাস শেষে নিয়মিত বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন।

স্রেফ বড় কর্তাগণের মনিটরিং জবাবদিহির অভাবে মূল কাজে ফাঁকি দিয়ে হরেকরকম ব্যবসা, রাজনীতি, আড্ডা সবই করছেন। তারা বেশ জানেন, দায়িত্ব অবহেলার জন্য বেতন কাটা যাবে না, বরখাস্ত হবেন না, চাকরি যাবে না, তাকে কোথাও জবাবদিহিটুকু করতে হবে না, তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও তার মতোই দায়িত্ব পালনে ফাঁকিবাজ। নিজের ব্যবহারেরটা ঠিক থাকলে, সেও কোনদিন সরজমিনে এই বাইরের করুণ পরিস্থিতি পরিদর্শনে আসবে না!

দায়টা তাই দিনশেষে, সকল দপ্তরের বড় কর্তার। পাবলিক নাক চেপে হেগে-মুতে দুটো গালি দিয়ে ঠিক ভুলে যাবে, এই ভেবে সেবা নিতে আসা জনসাধারণের অসুবিধা বুঝতে ও সমাধান করতে না পারলে অন্তত আমার চোখে আপনি কখনোই সৎ, নিষ্ঠাবান, দায়িত্বশীল, বা সফল কর্তা নন! নিজেকে সফল ভাবার আগে, নিজ প্রতিষ্ঠানের বাথরুমের পরিবেশ ঠিক করেন।

লেখক: সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *