মে ৬, ২০২৪

নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মত কোনও ম্যাচ ১০ উইকেটে জিতল বাংলাদেশ। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের ব্যাটে ১০২ রানের লক্ষ্য বাংলাদেশ ছুঁয়ে ফেলল ১৪ ওভারেই। ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে মাঠ ছাড়ল তামিম ইকবালের দল।

১০২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের পক্ষে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে থাকেন দুই ওপেনার। পাওয়ার প্লে’তে গ্যাপ শট খেলার সঙ্গে উড়িয়ে মারার প্রবনতাও ছিল তাদের মাঝে। এরই সুবাদে সপ্তম ওভারের মাঝে তাদের ব্যাটে দলীয় ৫০’র ঘরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। এরপর পরের ৩ ওভারে আরও দ্রুতগতিতে স্কোরবোর্ডে রান তোলেন তামিম-লিটন। ফলে প্রথম পাওয়ারপ্লে’তেই বাংলাদেশ পুঁজি পায় ৮১ রানের। এমন অবস্থায় দলের জয় ছিল সময়ের ব্যাপার। ব্যক্তিগত হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে লিটন ম্যাচ শেষ করেন ১৪তম ওভারেই। তার সঙ্গী তামিম অপরাজিত ছিলেন ৪১ রানে।

এর আগে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় এবং শেষ ওয়ানডেতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে সতর্ক শুরুই করে আইরিশরা। দুই ওপেনার স্টিফেন দোহেনি এবং পল স্টার্লিং বাংলাদেশের দুই পেসার হাসান মাহমুদ এবং তাসকিন আহমেদকে দেখেশুনেই লিভ করছিলেন। এতে দলের রানও বাড়ছিল না। স্লিপে দাঁড়ানো তিন ফিল্ডারও হতাশ হচ্ছিলেন বারবার। পঞ্চম ওভারে আইরিশ ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারি হাঁকান দোহেনি। যদিও এর এক বল পরই প্যাভিলিয়নে ফিরে যান তিনি। হাসানের করা লেংথ ডেলিভারিটি বুঝতে পারেননি তিনি। সেটি ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে জমা পড়ে

ফেরার আগে ২১ বলে ৮ রান করেন এই ওপেনার। পরের ওভারে অবশ্য আবারও উইকেটের সম্ভাবনা জানিয়েছিলেন তাসকিন। ওভারের দ্বিতীয় বলটি স্টার্লিংয়ের ব্যাটে লেগে ডিপ থার্ড অঞ্চল দিয়ে যাওয়ার সময় সেটা থামিয়ে দেন একাদশে ফেরা মেহেদী হাসান মিরাজ। পয়েন্ট অঞ্চল থেকে বাম দিকে দৌড়ে ক্যাচটি লুফে নেয়ার চেষ্টায় ছিলেন মিরাজ। যদিও বল থেকে একটু দূরে ছিলেন তিনি। অ্যান্ড্রু বালবির্নি এবং স্টার্লিংয়ের এই জুটিও ভাঙেন হাসান। ইনিংসের নবম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন এই পেসার।

সেই ওভারের প্রথম বলে স্টার্লিংকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলেন হাসান। ১২ বলে ৭ রান করে বিদায় নেন অভিজ্ঞ এই ওপেনার। একই ওভারের চতুর্থ বলে হ্যারি টেক্টরকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে বিদায় করেন তরুণ এই পেসার। যদিও আম্পায়ার শুরুতে আউট দেননি। পরে অধিনায়ক তামিম ইকবাল রিভিউ নিলে তারপর মাঠ ছাড়েন টেক্টর। হাসানের ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে সময় মতো ব্যাট নামিয়েছিলেন টেক্টর। যদিও তার ব্যাটে লাগার আগে ছুঁয়ে যায় সামনের প্যাড।

ইনিংসের দশম ওভারে উইকেটের দেখা পান তাসকিন। তার করা শর্ট বলটি কোনো ফুট মুভমেন্ট ছাড়াই শরীরের দূর থেকে খেলার চেষ্টা করেন অধিনায়ক বালবার্নি। ফলে বলটি তার ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে চলে যায় প্রথম স্লিপের দিকে। ক্যাচটি ধরতে একটুও ভুল হয়নি এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ফিল্ডার নাজমুল হোসেন শান্তর। টেক্টর রানে খাতা খুলতেই পারেননি, অপরদিকে বালবির্নি করেন ৬ রান। পাওয়ার প্লে’র দশ ওভারে চার উইকেট হারিয়ে ২৭ রান তোলে আয়ারল্যান্ড। বিপদ থেকে দলকে টেনে তোলার দায়িত্ব নেন লরকান টাকার এবং ক্যাম্ফার। দুজনে মিলে ৪২ রানের জুটিও গড়েন। এই জুটি ভাঙেন ইবাদত হোসেন। টাকারকে দারুণ এক রিভার্স সুইংয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরান এই পেসার।

ইবাদতের ইয়র্কারটি ফ্লিক করতে গিয়ে ব্যাট নিজের বুটে লাগান টাকার। বলটি বাতাসে একটু দেরিতে সুইং করে সেটি টাকারের পায়ে লাগে। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি টাকার। আম্পায়ারের যৌক্তিক সিদ্ধান্তই বহাল থাকে। ফেরার আগে ৩১ বলে চারটি চারে ২৮ রান করেন টাকার। ঠিক পরের বলে জর্জ ডকরেলকে বিদায় করেন ইবাদত। গুড লেংথে করা ভেতরে ঢোকা বলটি ডকরেলের স্টাম্প উপড়ে দেয়। কোনও রান না করেই বিদায় নেন ডকরেল।

এবাদতের এমন বোলিংয়ের পর আবারও আক্রমণে আসেন তাসকিন। ২২ তম ওভারে জোড়া উইকেট নেন তিনিও। তাসকিনের দ্রুত ধেয়ে আসা বলটি অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের ব্যাটে লেগে মিড উইকেটে ক্যাচ চলে যায়। ক্যাচটি লুফে নেন নাসুম আহমেদ। এর এক বল পর মার্ক অ্যাডায়ারকে ইনসাইড এজে বোল্ড করেন তাসকিন। ম্যাকব্রাইন ১ এবং তাসকিন শূন্য রানে বিদায় নেন। তারপর একাই লড়াই চালিয়ে যান ক্যাম্ফার। তার কল্যাণে একশর কাছাকাছি পৌঁছে যায় আয়ারল্যান্ড। এই ব্যাটারকে বিদায় করে নিজের চতুর্থ উইকেট পূরণ করেন হাসান। তরুণ এই পেসারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফাইন লেগে তাসকিনের ক্যাচে বিদায় নেন ক্যাম্ফার। ৪৮ বলে ৩৬ রান করেন ক্যাম্ফার। ইনিংসে ছিল চারটি চারের মার।

হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ এবং ইবাদত হোসেনের অসাধারণ পেস বোলিংয়ে মাত্র ১০১ রানেই গুঁটিয়ে গেলো আয়ারল্যান্ড। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এ দিন অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন হাসান-তাসকিন-ইবাদতরা। তিনজনই প্রথক তিনটি ওভারে আইরিশ শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন। আইরিশদের হয়ে কেবল কার্টিস ক্যাম্ফারই একটু লড়াই করতে পেরেছেন। বাংলাদেশের হয়ে দশটি উইকেটই নিয়েছেন পেসাররা। লাল-সবুজের ওয়ানডে ইতিহাসে এবারই প্রথমবার এমন ঘটনা ঘটেছে।

বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট নিয়েছেন হাসান। ৮.১ ওভারে ৩২ রান খরচায় পাঁচ উইকেট নিয়েছেন হাসান। ২৬ রান খরচায় তিন উইকেট নেন তাসকিন। আর অবশিষ্ট দুই উইকেট নেন ইবাদত, ২৯ রান খরচায়। নাসুম আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজরা ৪ ওভার করলেও উইকেট শূন্য ছিলেন। এই ম্যাচে বোলিংই করেননি সাকিব আল হাসান। আইরিশরা অলআউট হয়েছে মাত্র ২৮.১ ওভারে।

 

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *