মে ৮, ২০২৪

সমীক্ষা অনুসারে, মাত্র 10% লোক শেয়ার বাজারে অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হয়েছে এবং পুঁজিবাজার তাদের জন্য লাভজনক প্রমাণিত হয়েছে | শেয়ার কেনাবেচা করা খুবই সহজ, যেকেউ সামান্য কিছু টাকা দিয়ে তা করতে পারে | কিন্তু পুঁজিবাজার হতে অর্থ উপার্জন একটি ভিন্ন-আঙ্গিকের কাজ অর্থাৎ এমন একটি পরিস্থিতি যা একজনের অভ্যস্ত বা প্রত্যাশা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, জটিলও বটে | স্বভাবতই এখানে একটি প্রশ্নের আবির্ভাব ঘটছে সেটি হল এই ১০ শতাংশ সফলদের সফলতার কারণ কি এবং কিভাবে আমরা এই ১০ পার্সেন্ট পুঁজিবাজার সফলদের ক্লাব এ নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারি ?

উত্তরটি আমি এক কোথায় এভাবে দিতে চাই, ১০ শতাংশের সফলতার মূল নিয়ামক হলো ৯০ শতাংশের ব্যর্থতা, সচেতনার অভাব, পুঁজিবাজার বিষয়ক শিক্ষার অভাব, টিপস কল, নিউস/ভিউস এবং গুজব নির্ভরতা | শেয়ার ব্যাবসাকে অন্য যেকোনো বিসনেস এর মতো বিসনেস হিসেবে অনুধাবন করতে না পারা। মনে রাখতে হবে শেয়ার বাজার গ্যাম্বল নয় যদি গ্যাম্বল হতো উন্নত দেশ তথা আমেরিকার ৫৫%, অস্ট্রেলিয়া ৪০%,ইউকে ৩৩% এবং জাপানে ৩০% পুঁজিবাজার এর সাথে সম্পৃক্ত হতো না। আমাদের দেশ পিছিয়ে থাকার কারণ হলো আমাদের ইকোসিস্টেম এন্ড কালচার, যেখানে সেভিংস এর উপরে জোর দেয়া হয় অথচ এর সম্পূর্ণ বিপরীত হলো সেসব দেশে যেখানে তারা তাদের সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই শিখান কিভাবে ইনভেস্ট করতে হয়। শেয়ার বাজারে কিছু ফিল্টারস রয়েছে যার দরুন আপনি বাজার প্রেডিক্ট করতে পারবেন পাশাপাশি বিশ্লেষণও | বলা বাহুল্য শেয়ার বাজার Inferior mentality and Get rich quicker জন্য নয় | শেয়ার বাজার গ্যাম্বল তাদের জন্য যারা মার্জিন অফ সেফটি ভায়োলেশন করেন, অন্যের কথায় বা গুজবে দুর্বল মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি তে বিনিয়োগ করেন , শেয়ার এর ইন্ট্রিন্সিক ভ্যালু এর উপরে মানে উচ্চ দামে কিনে থাকেন। অনেকেই বলতে পারেন দুর্বল কোম্পানি বা পচা কোম্পানির বাজারে দাম বাড়ে। শেয়ার বাজারে এ একটা কথা প্রচলিত আছে The Harder they Rise, The Harder they fall. যেসব কোম্পানির প্রাইস বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই সেটাই তো গ্যাম্বল, অনেকটা পিলও পাসিং গেম এর মতো | যার সর্বশেষ শিকার হন আমাদের সাধারণ বিনোয়োগকারী | এখন আসি এই ১০ শতাংশের শেয়ার বাজারে সফলতার রহস্য এবং কি এমন অত্যাবর্ষকীয় গুণাবলী তারা রপ্ত করেছেন যার দরুন তাদের সফল বিবেচনা করা হয় |

তন্মধ্যে –তাদের দক্ষতা আছে, যারা তাদের বিনিয়োগের উপর মনস্তাত্ত্বিক নিয়ন্ত্রণ রাখে , তাদের কৌশল আছে, তাদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার আলোকে বাজারে বিনিয়োগ ডিসিশন নেয়ার জন্য সক্ষমতা ডেভেলপ করেছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাদের রয়েছে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, অর্থ ব্যবস্থাপনা এবং নিয়মানবর্তীতা | যা তাদের অন্য সকলের থেকে সবদিক দিয়ে এগিয়ে রাখে। বলাই চলে এইসব গুণাবলী আপনকে আমাকে এই ১০ শতাংশ ব্রাকেট এ অন্তর্ভুক্তির পূর্বশর্ত | সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বলবো প্রথমেই যে জিনিসটা গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো পুঁজিবাজারের একেবারেই মৌলিক বিষয়গুলি শিখুন | উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলি অর্জন করা সম্ভব তার জন্য প্রয়োজন সদিচ্ছা, অধ্যাবসায় এবং ভুল হতে শিক্ষা নেয়ার মানসিকতা | ইকোনমিক ফিনান্সিয়াল ইনডিকেটর যার প্রভাব রয়েছে মার্কেটে এবং কিধরনের প্রভাব এবং তা কতটা দীর্ঘ মেয়াদি সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে ও সচেতন হতে হবে। প্রত্যকের একটা নিজস্ব বিনিয়োগ প্ল্যান ডেভেলপ করা উচিত যা তার Risk Appetite, Economical Condition and Time Horizon নির্দিষ্ট করবে | পুঁজিবাজার এ সর্বদা আপনার বিনোয়োগ পারফরমেন্স ট্র্যাক করুন | কোনোভাবেই shell কোম্পানিতে বিনোয়োগ নয় | পরিষ্কার ধারণা রাখুন বিনোয়োগ এবং ট্রেডিং দুটি আলাদা বিষয়। ট্রেডিং ইজ stressful অপরদিকে বুদ্ধিদীপ্ত দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ পুঁজিবাজার সাফল্যের সম্ভাবনা প্রসারিত করে |

মেজবাউদ্দিন মো. জীবন চৌধুরী
অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, আহকাম এন্ড অ্যাসোসিয়েটস বিজনেস লিমিটেড
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ট্যাক্সসেন্স লিমিটেড

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *