মে ৯, ২০২৪

উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানে সামরিক বাহিনীর সাথে দেশটির আধা-সামরিক বাহিনীর সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে এবং লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ১৮০০ মানুষ।

গত শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই সংঘাতে সুদানের বহু হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং চিকিৎসা সেবা ও খাবারের সরবরাহ কমে গেছে। বার্তাসংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

সংবাদমাধ্যম বলছে, সুদানের সেনাবাহিনী এবং কুখ্যাত আধা-সামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-র মধ্যে ক্ষমতার লড়াই দেশটিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। রাজধানী খার্তুমে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এবং সেনা সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বাহিনীর মধ্যে লড়াই চলছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘস্থায়ীভাবে অস্থিতিশীল বলে পরিচিত সুদানের রাজধানীতে এই লড়াই নজিরবিহীন এবং এমনকি এটি বেশ দীর্ঘায়িতও হতে পারে। যদিও আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিকভাবে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে কূটনীতিকরা সক্রিয় হতে শুরু করেছেন।

দুই বাহিনীর মধ্যকার এই সংঘর্ষে বিমান হামলা, আর্টিলারি এবং ভারী গোলাগুলির ব্যবহারও দেখা যাচ্ছে।

সুদানে জাতিসংঘের মিশনের প্রধান ভলকার পার্থেস রুদ্ধদ্বার অধিবেশনে নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৮৫ জন নিহত এবং আরও ১৮০০ জন আহত হয়েছেন। বৈঠকের পর পার্থেস সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি খুবই অস্পষ্ট। তাই লড়াইয়ের ফলে ক্ষমতার ভারসাম্য কোথায় স্থানান্তরিত হচ্ছে তা বলা খুব কঠিন।’

এর আগে সোমবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সুদানের যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে ‘অবিলম্বে শত্রুতা বন্ধ করার’ আহ্বান জানান। তিনি সতর্ক করে বলেন, লড়াইয়ের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেলে তা ‘দেশ ও অঞ্চলের জন্য ধ্বংসাত্মক হতে পারে।’

এর আগে সুদানের চিকিৎসকরা লড়াইয়ে প্রায় ১০০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পাশাপাশি উভয় পক্ষের ‘বহু সংখ্যক’ যোদ্ধার মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিলেন। তবে হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ সংঘাতে আহত অনেক মানুষ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেননি।

সুদানের ডাক্তারদের ইউনিয়ন সতর্ক করেছে, লড়াইয়ের কারণে খার্তুম এবং অন্যান্য শহরের একাধিক হাসপাতাল ‘ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে। এর মধ্যে কিছু শহরের চিকিৎসা সেবা সম্পূর্ণ ‘পরিষেবার বাইরে’ রয়েছে বলেও জানানো হয়।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে উত্তর আফ্রিকার এই দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর থেকে সেনাবাহিনীর জেনারেলরা ‘স্বাধীন কাউন্সিল’-এর নামে দেশ পরিচালনা করছিলেন।

এই স্বাধীন কাউন্সিলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হলেন জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো। অপরদিকে স্বাধীন কাউন্সিলের প্রধান হলেন জেনারেল আব্দেল ফাতাহ আল-বুরহান।

বেসামরিক সরকার গঠনের অংশ হিসেবে সম্প্রতি আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর এই বিষয়টি নিয়েই সেনাবাহিনী এবং আরএসএফের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।

সেনাবাহিনী বলছে, আরএসএফকে দুই বছরের মধ্যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করা হবে। কিন্তু আরএসএফ বলছে, এই একীভূতকরণের প্রক্রিয়া যেন অন্তত ১০ বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরএসএফকে একীভূত করলে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব কে দেবে এ নিয়েও দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *