মে ৬, ২০২৪

গত চ্যাম্পিয়নস লিগের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই। সেই ম্যাচের পুনরাবৃত্তি কিংবা লিভারপুলের প্রতিশোধ যে কোনো ফলই আসতে পারত। কিন্তু চলতি সিজনে ধুঁকতে থাকা ইয়ুর্গেন ক্লপের দল আগেই ভয়ে কুঁকড়ে পড়ে। ম্যাচের আগেই তিনি বিষাদময় ফাইনালের হতাশার কথা বলছিলেন। ম্যাচ শেষে সেই ভয় আরো গাঢ় হলো। নিজেদের মাঠেই রিয়াল মাদ্রিদের কাছে বড় ব্যবধানে হেরেছে লিভারপুল।

মঙ্গলবার রাতে অ্যানফিল্ডে কার্লো আনচেলত্তির দলকে আতিথ্য দেন তারই বন্ধু ক্লপ। ম্যাচ শুরুর পর বন্ধুত্ব থেকে তুমুল দ্বৈরথের সৃষ্টি হয়। শুরু থেকেই উত্তেজনা বাড়াতে থাকে দু’দল। ম্যাচে পরপর দুই গোল করে এগিয়ে মোহামেদ সালাহরা। ইঙ্গিত দিয়েছিলেন খুব সহজে থামবে না এ লড়াই!

তবে ম্যাচের ফল এখনও জানা না থাকলে বেশ চমকই রয়েছে। দুই গোল করে মূলত করিম বেনজেমা ও ভিনিসিয়াসদের ক্ষেপিয়ে দিয়েছে লিভারপুল। কারণ, এরপর তারা লিভারপুলের জালে গুণে গুণে পাঁচবার বল জড়িয়েছে। আগের আসরের রানার্সআপ হওয়ার ক্ষত মোছা তো দূরে থাক, প্রথম লেগে বড় ক্ষত নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন সালাহরা। ভিনিসিয়াস ও বেনজেমার ডাবল স্কোরে লিভারপুল হেরেছে ৫-২ গোলের বড় ব্যবধানে।

ম্যাচের মাত্র চতুর্থ মিনিটেই এগিয়ে রিয়ালের জালে বল জড়ায় লিভারপুল। দলকে প্রথমে লিড এনে দেন দারউইন নুনেজ। তাকে বলের যোগান দেন সালাহ। ১৪ মিনিটে অবিশ্বাস্য একটি ভুল করে বসেন রিয়াল গোলরক্ষক। দানি কারবাহলের ব্যাক পাস পেয়েছিলেন কোর্তোয়া। বল ঠিকঠাক মারতে গিয়ে হাঁটু দিয়ে গুঁতো মেরে বসেন। সামনেই দাঁড়িয়ে থাকা সালাহ বলের নাগাল পেতেই বাঁ পায়ের শটে গোল করে ইউরোপে লিভারপুলের সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড গড়েন। পেছনে পড়লেন ক্লাব কিংবদন্তি স্টিভেন জেরার্ড।

এদিন দু’দলের গোলরক্ষকরাই প্রতিপক্ষ দলের দুটি গোলে ভূমিকা রেখেছেন। একজনকে সান্তনা দিতেই যেন অপরজনও একই ধরনের ভুল করে বসলেন। অথচ কোর্তোয়া এবং অ্যালিসন বেকার দুজনই বিশ্বের সেরা গোলরক্ষকদের মধ্যে অন্যতম। মাত্র ১৪ মিনিটে গোল খাওয়ার পর বাকি সময়টাকে ইতিহাস বানিয়ে নেয় রিয়াল। অথচ পরিসংখ্যান বলছিল, চ্যাম্পিয়নস লিগে এত দ্রুত গোল খাওয়ার পর রিয়াল কখনোই জিততে পারেনি।

মাত্র ৭ মিনিটের ব্যবধানেই রিয়াল তার খোলস খুলে ফেলে। তারা ২১তম মিনিটে প্রথম নিজেদের হয়ে এক গোলের ব্যবধান কমিয়ে আনে। লিভারপুলের বক্সে ঢুকে করিম বেনজেমাকে বলটা একটু ধার দিয়ে ফিরতি পাসেই লিভারপুলের তিন ডিফেন্ডারের মাঝ থেকে বাঁকানো শট নেন ভিনিসিয়ুস। চোখ ধাঁধানো এক গোল। তারপরই মূলত কোর্তোয়ার ভুলের পুনরাবৃত্তি করেন অ্যালিসন। ৩৬ মিনিটে অ্যালিসনকে ব্যাক পাস দেন ডিফেন্ডার জো গোমেজ। ভিনিসিয়াস এগিয়ে যান চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে। কিন্তু গোমেজকে ফিরতি পাস দিতে গিয়ে ভিনিসিয়াসের গায়ে মেরে বসেন অ্যালিসন। পরে সেটিকে শূন্যে ভাসিয়ে গোলে পরিণত করেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। ২-২ গোলে সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দু’দল।

দ্বিতীয়ার্ধসহ পুরো ম্যাচেই লিভারপুলের রক্ষণভাগ নিয়ে ছেলেখেলায় মেতেছেন বেনজেমা, ভিনিসিয়াস ও রদ্রিগো। গোমেজ, ভার্জিল ফন ডাইক ও রবার্টসন সেসব আক্রমণ চেয়ে চেয়ে দেখেছে। অন্যদিকে রিয়ালের মাঝমাঠ একাই সামলেছেন লুকা মদ্রিচ। প্রথমার্ধেই ভিনিসিয়াস ইতিহাস গড়ে ফেলেছেন। ইউরোপিয়ান কাপ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ মিলিয়ে লিভারপুলের জালে তারচেয়ে কেউ (৫ গোল) বেশি দিতে পারেনি।

বিরতির পর লিভারপুল ঠিকমতো গুছিয়ে নেওয়ার আগেই ফ্রি কিক পায় রিয়াল। ৪৭ মিনিটে পাওয়া সেই ফ্রি কিক থেকে মিলিতাও হেডে কীভাবে গোল করলেন সেই প্রশ্ন নিশ্চয়ই ফন ডাইকদের করবেন লিভারপুল কোচ ক্লপ। আশপাশে তিনজন ডিফেন্ডারকে রেখে মিলিতাও হেড করেছেন, কেউ বাধা দেননি! ৫৫ মিনিটে বেনজেমার করা গোলেও গোমেজের পজিশন নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। রদ্রিগোর পাস থেকে শট নিয়েছিলেন বেনজেমা। ৬৭ মিনিটে বেনজেমার দ্বিতীয় গোলটি প্রতিআক্রমণের ফসল।

একই দিনই রিয়ালের সাবেক কিংবদন্তী আমানসিও আমারো চিরবিদায় নেন। দুর্দান্ত এ জয় তাকে উৎসর্গ করেছে বেনজেমারা, ‘ই জয়টা তার জন্য। আমরা নিজেদের মানসিকতা দেখিয়েছি। গোল করেছি। আমরা এই চ্যাম্পিয়নস লিগটা চাই। এই জয়টা আমরা আমাদের অনারারি সভাপতি আমানসিও আমারোকে উৎসর্গ করছি।’

ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় রিয়াল এই প্রথম প্রতিপক্ষের মাঠে দুই গোল ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে জিতল, সেটাও অ্যানফিল্ডে ৫ গোল করে! গতবারের এই দুই ফাইনালিস্ট সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ১৬ মার্চ ফিরতি লেগে মুখোমুখি হবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *