মে ১৯, ২০২৪

তাৎক্ষণিক টাকা লেনদেন ও পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এর ফলে এই ব্যাংকিংয়ে দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে গ্রাহক। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে রেকর্ড ১ লাখ ২৪ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ১ লাখ ২৪ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। এর আগের বছরের একই মাসে লেনদেনের পরিমাণ ছিলো ১ লাখ ৭ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ১৭ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা।

এদিকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস অর্থাৎ জুলাইয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয়েছিলো ৮৯ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। আগস্ট মাসে কিছুটা কমে লেনদেন হয়েছিলো ৮৭ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। এরপরে সেপ্টেম্বরে ৮৭ হাজার ৬৩৫ কোটি, অক্টোবরে ৯৩ হাজার ১৩ কোটি, নভেম্বরে ৯২ হাজার ১২৫ কোটি এবং ডিসেম্বরে লেনদেন হয়েছিলো ৯৬ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ১ লাখ ৬৯৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এরপরে ফেব্রুয়ারি মাসে লেনদেন ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা কমেছে। এই মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয়েছে ৯৭ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। এছাড়া মার্চ মাসে ১ লাখ ৮ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই- এপ্রিল) দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ২০ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৮টি। এপ্রিল শেষে নিবন্ধিত হিসাব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ কোটি ৬৮ লাখ ৯ হাজার ২১০টি। গত বছরের জুন শেষে যার সংখ্যা ছিলো ১৭ কোটি ৮৬ লাখ ৩৯ হাজার ৬৪২টি।

এদিকে গত ডিসেম্বর শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত হিসাবের সংখ্যা ছিলো ১৯ কোটি ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৫৭৩টি। অর্থাৎ চলতি বছরের চার মাসের ব্যবধানে হিসাব বেড়েছে ৯৬ লাখ ২৫ হাজার ৬৩৭টি। এপ্রিল শেষে পুরুষ গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৬০ লাখ ২৯ হাজার ৯২৫জন। অপরদিকে নারী গ্রাহক ৮ কোটি ৪১ লাখ ৪৬ হাজার ৩০২জন। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৭৯১ জন। অতিদ্রুত শহর থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে শহরে সর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুযোগ তৈরি হওয়ায় মোবাইল ব্যাংকিং দেশের ব্যাংকিং সেবায় নতুন সম্ভাবনা এনে দিয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে বিরাট এক গতি সঞ্চার করেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এই সেবা। একইসঙ্গে নতুন কর্মসংস্থান যোগ হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতিদিনের লেনদেন ছাড়াও বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল পরিশোধ করা যায়, করা যায় কেনাকাটা। সেবামূল্য পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, প্রবাসী আয় পাঠানো সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন পছন্দের শীর্ষে। কম খরচ ও দ্রুত দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে টাকা পাঠাতে প্রতিদিনই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য হিসাব খুলছেন বিপুলসংখ্যক গ্রাহক। প্রতিমাসেই বাড়ছে গ্রাহকসংখ্যা।

মোবাইলে আর্থিক সেবায় (এমএফএস) এপ্রিল মাসে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে ৩৪ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় ৪ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। এছাড়া বিভিন্ন পরিষেবার ২ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয় এবং কেনাকাটায় ৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রকেটের মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংসেবা চালু করে বিকাশ। এছাড়াও নগদ সহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দিচ্ছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *