মে ১৯, ২০২৪

ব্যাংকঋণের ৯ শতাংশ ক্যাপ তুলে দেওয়া হয়েছে। শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সার্বিক অর্থনীতির গতিধারা অব্যাহত রাখা ও দক্ষ ঋণ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এবং ব্যাংকঋণের বাজারভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে নতুন নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সোমবার (১৯ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে। এর আগে রোববার (১৮ জুন) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১ম ষান্মাসিকের জন্য (জুলাই-ডিসেম্বর-২০২৩) নতুন মুদ্রানীতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, এখন থেকে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের বাজার সুদকে ভিত্তি ধরে ‘রেফারেন্স রেট’ অর্থাৎ সুদ গণনা হবে। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‌‘এসএমএআরটি’ (স্মার্ট-সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ)। এ পদ্ধতিতে ছয় মাসের ট্রেজারি বিলের গড় হার ধরে ঠিক হবে ‘রেফারেন্স রেট’। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট প্রতি মাসের প্রথম কর্মদিবসে ‘এসএমএআরটি ইনডেক্স’ বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে। ‘এসএমএআরটি ইনডেক্স’ এর সঙ্গে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ যোগ করে ঋণ দিতে পারবে। আর কৃষি ও পল্লী ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ মার্জিন যোগ করে সুদহার নির্ধারণ করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ছয় মাসে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলে গড় সুদ ছিল ৭ শতাংশের কাছাকাছি। এর সঙ্গে ৩ শতাংশ যোগ করলে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদহার হবে ১০ শতাংশের মতো। কৃষি ও পল্লী ঋণে ২ শতাংশ মার্জিন যোগ হলে সুদহার হবে ৯ শতাংশ।

কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাত, ভোক্তা ঋণ ও গাড়ি কেনার ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত এক শতাংশ হারে সুপারভিশন চার্জ কাটতে পারবে। অর্থাৎ সিএমএসএমই ঋণের সুদহার হবে প্রায় ১১ শতাংশ। তবে সুপারভিশন চার্জ বছরে একবার আদায় বা আরোপ করা যাবে। বার্ষিক ভিত্তিতে আরোপিত এ সুপারভিশন চার্জের ওপর চক্রবৃদ্ধি হারে কোনো চার্জ বা সুদ আরোপ করা যাবে না। তবে কোনো ঋণ হিসাব বছরের মধ্যবর্তী সময়ে সমন্বিত করার ক্ষেত্রে ১ শতাংশ হারে আনুপাতিক সময়ের জন্য সুপারভিশন চার্জ আদায় করা যাবে।

যে মাসের সুদহার নির্ধারণ করা হবে তার আগের মাসের ‘এসএমএআরটি’কে ভিত্তি ধরে সুদহার নির্ধারণ করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, মার্চ মাসের সুদহার নির্ধারণে ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য নির্ধারিত ‘এসএমএআরটি’কে বিবেচনায় নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকারের গঠিত প্রণোদনা প্যাকেজ ও বিশেষ তহবিলের আওতায় প্রদত্ত ঋণের সুদহার নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট তহবিলের জন্য প্রণীত নীতিমালা প্রযোজ্য হবে। ক্রেডিট কার্ডের সুদ হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত বিদ্যমান সার্কুলার ও সার্কুলার লেটার বর্ণিত নির্দেশনা বলবৎ থাকবে।

সুদহার পরিবর্তনের ফলে গ্রাহকের ঋণের প্রদেয় কিস্তির পরিবর্তন করতে হলে কিস্তি পুনর্নির্ধারণের আগে আবশ্যিকভাবে গ্রাহককে জানাতে হবে। ইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিক পরিচালিত ব্যাংক ডেট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক ঘোষিত ‘এসএমএআরটি’কে ভিত্তি ধরে তার সঙ্গে নির্ধারিত মার্জিন যোগ করে বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফার হার নির্ধারণ করবে। একইসঙ্গে সুপারভিশন চার্জ আদায় করতে পারবে।

কোনো নতুন ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মাসের জন্য নির্ধারিত সুদহার কার্যকর হবে। সুদহার স্থির অথবা পরিবর্তনশীল যে প্রকৃতিরই হোক না কেন, ঋণ দেওয়ার আগে ঋণগ্রহীতার সম্মতি নিতে হবে। তবে পরিবর্তনশীল প্রকৃতির সুদহার প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রতি ছয় মাস পর পর পরিবর্তন কার্যকর হবে। এসব নির্দেশনা ১ জুলাই ২০২৩ তারিখ থেকে কার্যকর হবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *