এপ্রিল ২৯, ২০২৪

পুঁজিবাজারে আর্থিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ২০২১ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে শেয়ারপ্রতি মুনাফার (ইপিএস) অস্বাভাবিক পতন খতিয়ে দেখছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই ধরাবাহিকতায় কোম্পানির সর্বশেষ হিসাব বছরের শেষ প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা থেকে হঠাৎ লোকসানের কারণ ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে যেসব বাজে ঋণের কারণে কোম্পানির প্রভিশন বেড়েছে তার তালিকাসহ বেশ কিছু নথিপত্র চেয়েছে কমিশন।

সম্প্রতি বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। গত ৪ অক্টোবর বিএসইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোম্পানির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে এসব তথ্য দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ওই বৈঠকে বিএসইসির পক্ষে নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমানের সভাপতিত্ব পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসান, অতিরিক্ত পরিচালক মো. ওহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও সরকারী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখার আলী খান, হেড অফ অ্যাকাউন্ট মো. এনায়েত কবির এবং কোম্পানির সচিব শারমিন আক্তার উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে সেগুলো হলো- ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরে বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের আর্থিক কর্মক্ষমতা, লোকসানের কারণ ও তার ব্যাখ্যা; উল্লিখিত সময়ে কোম্পানির পরিচালকদের ও তাদের আত্মীয়-স্বজনের এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষের লেনদেনের তথ্য; ২০২১ সালে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির সে সকল বাজে ঋণের কারণে প্রভিশন বেড়ে গেছে, সেগুলোর সকল তালিকা জমা দিতে হবে।

সেইসঙ্গে ওই সকল বাজে ঋণ পুনরুদ্ধারের জন্য ইতিমধ্যে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেই তথ্য, এ ছাড়া বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টকে প্রয়োজনীয় সহায়ক নথিসহ ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত ও অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন দিতে হবে।

বে লিজিংয়ের ২০২১ সালের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর, ২১) শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) দেখিয়েছে ২.৭৫ টাকা। তবে শেষ ৩ মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২১) লোকসান হয়েছে ৩.৭৪ টাকা। ফলে ১২ মাস শেষে কোম্পানির মুনাফার পরিবর্তে শেয়ারপ্রতি লোকসান দেখিয়েছে ০.৯৯ টাকা।

কোম্পানির ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরে হাঠাৎ লোকসানের কারণ খতিয়ে দেখছে বিএসিইসি। এ লক্ষে গত ২২ সেপ্টেম্বর তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির উপ-পরিচালক কাজী মো. আল-ইসলাম, সহকারী পরিচালক মো. কাউসার আলী ও মো. আতিকুর রহমান। গঠিত কমিটিকে ২০ কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানিটির ৯ মাসের অনিরীক্ষিত ও ১২ মাসের নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাবের মধ্যে কোনো অসঙ্গতি রয়েছে কিনা, কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে ইনসাইডার ট্রেডিং হয়েছে কিনা, ওই অস্বাভাবিক আর্থিক হিসাবের কারণে শেয়ার দরে প্রভাব এবং ম্যানুপুলেশন হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে কমিশন।

এদিকে বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের পরিচালনা পর্ষদ ২০২১ সালের সমাপ্ত হিসাব বছরে সাধারণ শেয়াহোল্ডারদের জন্য শেয়ার প্রিমিয়াম থেকে ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তবে ওই সময়ে কোম্পানির রক্ষিত মুনাফা এবং চলতি বছরের মুনাফা উভয়ই নেতিবাচক রয়েছে। এরপরও কোম্পানিটি শেয়াহোল্ডারদের জন্য বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যা বিএসইসির জারি করা নির্দেশনার পরিপন্থী বলে মনে করে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। তাই কোম্পানিটির এই ঘোষণাকৃত বোনাস লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করবে বলে বিএসইসি জানিয়েছে ডিএসই।

২০২১ বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল মাইনাস ৪৮ পয়সা। গত ৩০ জুন, ২০২২ তারিখে সমন্বিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ১৭ টাকা ৮২ পয়সা। আগামী ৩০ অক্টোবর ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে।

প্রসঙ্গত, বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০৯ সালে। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১৪০ কোটি ৮৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১৪ কোটি ৮ লাখ ৮৮ হাজার ৪৪৩টি। এর মধ্যে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকের হাতে ৩০.০৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২১.০১ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.০১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৭.৯১ শতাংশ শেয়ার আছে। ডিএসইতে বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের শেয়ার বুধবার (২৬ অক্টোবর) সর্বশেষ ২৩.৯০ টাকায় লেনদেন হয়েছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *