মে ১, ২০২৪

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক জানায়, বেসিক ব্যাংক সরকারের কোনো ব্যাংক অর্ডারের মাধ্যমে স্থাপিত নয়। ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সরকারি নন। তবে শতভাগ রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে।

ব্যাংকটি জানায়, বাংলাদেশ সরকারের গেজেট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিপত্রের মাধ্যমে বেসিক ব্যাংককে শতভাগ রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এছাড়া আদালতের রায়ে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সরকারি কর্মচারী হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।

এদিকে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিনের এক বৈঠক হয়। এ বৈঠকে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়।

এরপর গত মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না হওয়ার জন্য বেসিক ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে গভর্নরের দপ্তরে এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়। তারা মনে করছেন, সরকারি ব্যাংক বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা অসামঞ্জস্যপূর্ণ, অযৌক্তিক ও বৈষম্য।

এরপরই সম্প্রতি গণমাধ্যমে বেসিক ব্যাংক নিয়ে আলোচিত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক। তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারি নন। বেসিক সরকারের কোনো ব্যাংক অর্ডারের দ্বারা স্থাপিত ব্যাংক নয়। সোনালী ব্যাংকের যেমন ব্যাংক অর্ডার আছে, বেসিকের তেমন নেই। একটা আইন দ্বারা কিন্তু সোনালী, রূপালী ও অগ্রণী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত। বেসিক ব্যাংক কোনো আইন দিয়ে প্রতিষ্ঠিত নয়। সরকার যেমন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হোল্ড করে, তেমনি বেসিকেরও শেয়ার হোল্ড করে।

তিনি আরও বলেন, সরকারি আর বেসিকের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সরকার যেটা রেভিনিউ থেকে দেয় সেটাই কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে সরকারের কমার্শিয়াল কাজের জন্য স্টাবলিস্ট করা। বেসিকও তেমন একটা প্রতিষ্ঠান। বেসিক স্পেশালাইজড একটা ব্যাংক ছিল যেটা একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়েছিল। এটা কিন্তু ব্যাংক হিসেবে সরকারের আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নয়।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে বেসিক ব্যাংক বলছে, আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির এমন বক্তব্য বেসিক ব্যাংকের বিষয়ে জনমনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি ব্যাংকের গ্রাহকদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বার্ষিক প্রতিবেদনে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ৬ টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের তালিকায় বেসিক ব্যাংকের নাম রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েব সাইটে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের তালিকায় বেসিক ব্যাংকের নাম উল্লেখ রয়েছে। অন্যান্য রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ন্যায় রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে বেসিক ব্যাংকেও বাংলাদেশের মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের মাধ্যমে নিয়মিত অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

ব্যাংকটি আরও জানায়, বর্তমানে দেশে কার্যরত রাষ্ট্র মালিকানাধীন অন্যান্য ব্যাংকগুলো যে বিধিমালা ও নীতিমালার আওতায় পরিচালিত হচ্ছে শতভাগ রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক লিমিটেডও একই বিধিমালা ও নীতিমালার আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রুপালী, বিডিবিএল যে সাংগঠনিক কাঠামোর আওতায় (অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক অনুমোদিত) পরিচালিত হচ্ছে; বেসিক ব্যাংকও একই সাংগঠনিক কাঠামোর আওতায় পরিচালিত হচ্ছে।

বেসিক ব্যাংক বলছে, শতভাগ রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকে অন্যান্য রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের মতো চাকুরী বিধিমালা অনুসরণ করা হয়। জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ অনুযায়ী, বেসিক ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তা বা কর্মচারিদের গ্রেড নির্ধারণ এবং বেতন ও অন্যান্য ভাতা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পেনশন সুবিধা রয়েছে।

এছাড়া বেসিক ব্যাংকে নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরুপে সরকারি ব্যাংকের অনুরূপ বিধিবিধান অনুসরণ করা হয়। এক্ষেত্রে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। দেশের অন্যান্য সরকারি ব্যাংকের ন্যায় শতভাগ রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয় বলেও জানিয়েছে ব্যাংকটি।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *