মে ১৭, ২০২৪

দীর্ঘদিন যাবৎ পুঁজিবাজারকে অস্থির করার পিছনে সোশ্যাল মিডিয়াকে দায়ী করা হচ্ছিলো। পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে একটি চক্র দীর্ঘদিন যাবৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক, হোয়াটস্যাপ, টুইটার ব্যবহার করে আসছিলো। চক্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পুঁজিবাজার কারসাজি করে আসছিল। তারা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কাছে মোটা অংকের চাঁদাও দাবি করতো। চাহিদা মতো টাকা পেলে দুর্বল কোম্পানির নামে ভালো তথ্য ছড়িয়ে বিনিয়োগে প্রলুব্ধ করা হতো। টাকা না পেলে ভালো কোম্পানির নামে ছড়ানো হতো গুজব।

গত ২৬ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলো- মো. আমির হোসাইন ওরফে নুরনুরানী (৩৭), নুরুল হক হারুন (৫২) আব্দুল কাইয়ুম (৩৯)।

চক্রান্তকারীদের হাত থেকে পুঁজিবাজারকে রক্ষা করতে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের কার্যকরী পদক্ষেপকে স্বাগত ও সাধুবাদ জানিয়েছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্যা বিজ২৪কে বলেন, ডিবি প্রধান হারুনের এই পদক্ষেপ অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। পুঁজিবাজারের উত্থান পতন থাকবেই। কিছু হলেই একদল রাস্তায় নেমে যুক্তিহীন গালিগালাজ ও যাকে তাকে নিয়ে অশালীন বক্তব্য দিয়ে থাকে। তাদের কাছে যেন আমরা জিম্মি হয়ে গেছি। গুটিকয়েক সুনির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তি কিছুদিন পর পর রাস্তায় নেমে লোক দেখানো প্রতিবাদের নামে চাঁদাবাজি করে আসছে। প্রায় সময় ওদের সদস্যরা আমাদের কাছে কল করে চাঁদা চায়, চাঁদা না দিলেই আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে অসম্মানিত করার হুমকি দেয়।

ডিবির গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের মধ্যে নুরুল হক হারুন নিজেকে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, দায়িত্বশীল পদে নিজেকে কেকি দাবি করলো এই বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। তবে ২০১০ সালে পুঁজিবাজারের ধ্বসের পর অনেকেই আমাদের সাথে রাজপথে প্রতিবাদ করেছেন। তাই বলে সবাই সংগঠনের পদধারী হয়ে যাবেন? অনেক বিনিয়োগকারীকে আমরাই চিনি না, যারা আমাদের সাথে প্রতিবাদ বা মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। আবার একদল আছে আমাদের সদস্যও নন, অথচ নিজেরা বিনিয়োগকারীদের সংগঠনের নাম ব্যবহার করে, বিভিন্ন সংগঠনের কার্ড ছাপিয়ে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন লিস্টিং কোম্পানিতে চাঁদাবাজি করে আসছে। আমরা বিভিন্ন ব্যক্তির নামে এ বিষয়ে অতীতে থানায় জিডি ও অভিযোগ করেছিলাম। পরবর্তীতে আমাদেরই চাঁদাবাজদের পক্ষ হতে উল্টো হুমকি ধামকির সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমরা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ করবো অপরাধী যেই হোক তাকে যেন ছাড় দেওয়া না হয়। গ্রেফতারকৃত হারুন আমাদের সংগঠনে ছিলেন। তিনি সেভ নিডি (Save Needy) নামক একটি ফেক আইডি দিয়ে সরকার ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের উদেশ্য করে অসম্মানিত, মিথ্যা তথ্য পোস্ট করে আসছিলেন। এ বিষয়টি সাইবার ক্রাইম ইউনিটের নজরে আসে এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুঁজিবাজারে ২০১০ সালে ধস পরবর্তী গড়ে ওঠা সংগঠনটির নেতা আরও বলেন, আমাদের জীবন যৌবন উৎসর্গ করে ফেললাম পুঁজিবাজার উন্নয়নে। চেষ্টা করছি, ফলাফল কি পেলাম তা আপনারাই জানেন। অবশ্যই ডিবি প্রধান যা করেছেন তা পুঁজিবাজার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। আমরা তাকে অনুরোধ করবো আগামীতেও যেন পুঁজিবাজারে তাঁদের তৎপরতা থাকে। যারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের রাস্তায় নামিয়ে দেয়, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা উচিত।

অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, এদের পাঁচ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। ঘটনা তদন্তে পুলিশের গোয়েন্দা সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা সংশ্লিষ্ট ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছে। এছাড়া তারা আরও বেশ কয়েকজনের নাম জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, যারা পেছন থেকে নেপথ্যের কারিগর হিসেবে কাজ করে থাকে। আশা করছি দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *