মে ৯, ২০২৪

বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির সিংহভাগই কটন থেকে আসলেও নিকট ভবিষ্যতে নন কটন খাত বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান।

গতকাল রোববার (৩ মার্চ) বিজিএমইএ-এর প্রকাশিত ‘বিয়ন্ড কটন: এ স্ট্র্যাটেজিক ব্লুপ্রিন্ট ফর ফাইবার ডাইভারসিফিকেশন ইন বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রি শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এ গবেষণাটি করেছে আন্তর্জাতিক পরামর্শক সংস্থা, ওয়াজির অ্যাডভাইজার। সংস্থাটি টেক্সটাইল, পোশাক এবং রিটেইল প্রভৃতি খাতগুলোকে নিয়ে পরামর্শক সংস্থা হিসেবে কাজ করে থাকে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী পোশাক তৈরিতে নন-কটন ফাইবার ব্যবহৃত হয় প্রায় ৭৫ শতাংশ। বিপরীতে, বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী পণ্যের ৭১ শতাংশ তৈরি করতে সুতির তন্তুর ওপর নির্ভরশীল। নন-কটনে যদি ১৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, তাহলে বাংলাদেশ ২০৩২ সালের মধ্যে ৪২ বিলিয়ন ডলারের নন-কটন গার্মেন্টস আইটেম রপ্তানি করতে সক্ষম হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক ফ্যাশন শিল্প তাদের বিনিয়োগ কটন থেকে অন্যান্য ফাইবারগুলোর দিকে সরিয়ে নিচ্ছে। ফাইবারগুলো শুধু সিন্থেটিকস (যেমন পলিয়েস্টার এবং নাইলন) নয়; বরং এগুলোর মধ্যে পুন:উৎপাদিত ফাইবার (যেমন ভিসকোস রেয়ন), পশুর তন্তু (উল এবং সিল্ক) এবং এমনকি অন্যান্য উদ্ভিজ্জ তন্তুও (যেমন লিনেন) রয়েছে। যদিও কটন ভিত্তিক পণ্যের চাহিদাও ব্যাপক। তবুও বৈচিত্র্যের দৃষ্টিকোণ থেকে, নন-কটন ফাইবারভিত্তিক পণ্যগুলো শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে। এ সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ শুধু যে ফ্যাশন বিশ্বের পরিবর্তনশীল প্রবণতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভোক্তাদের পরিবর্তিত চাহিদাগুলো মেটাতে সক্ষম হবে, তা নয় এর সঙ্গে সমসাময়িক ফ্যাশন শিল্পে মুখ্য খেলোয়ার হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারে।

ওয়াজির অ্যাডভাইজারের প্রকল্প প্রধান বরুণ বৈদ বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি ঝুড়িতে নন-কটনভিত্তিক পণ্যের অন্তর্ভুক্তি, রপ্তানি বাজার আরও সম্প্রসারিত করতে পারে। এরই মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বৈশ্বিক পোশাক বাণিজ্যে তার যোগ্যতা প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ। দেশটি নন-কটন পণ্যের সমগ্র সাপ্লাই চেইন বিকাশের মাধ্যমে উচ্চ প্রবৃদ্ধির গতিপথ বজায় রাখার লক্ষ্য ধরে রাখতে পারে।

আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, কৃত্রিম ফাইবার ব্যবহার করে বিজিএমইএ স্থানীয়ভাবে তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক বাজারের শেয়ার ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে উন্নীত করতে চায়। কারণ কৃত্রিম তন্তু থেকে তৈরি পোশাক পণ্যের দাম বেশি। সাম্প্রতিক বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে পোশাকখাতের ওপর কি ধরনের প্রভাব পড়তে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ফারুক হাসান বলেন, আমরা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য সংযোজন করি। স্থানীয় বাজার থেকেও কাঁচামাল সংগ্রহ করি। ফলে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় সব কিছুরই দাম বেড়ে যাবে। মূল্যস্ফীতি খুবই বেশি, এসময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় আমাদের ব্যয় আরও বাড়িয়ে দেবে। সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্যোগটিও বাধাগ্রস্থ হবে।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, গবেষণার ফলাফল এবং সুপারিশ আমাদের শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের জন্য একটি পথ নকশা দিয়েছে। যা শিল্পকে বিকাশমান বিশ্ব বাজারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার পাশাপাশি শিল্পের উন্নয়নের জন্য সহায়ক হবে। বিজিএমইএ বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে বৈচিত্র্যকরণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ প্রবৃদ্ধির জন্য কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই প্রতিবেদনটি আমাদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনও ফ্যাশনের ওপর বড় প্রভাব ফেলে। ভোক্তারা বেশি কার্যকারিতা এবং স্থায়িত্বের কারণে সুতির জিনিসের চেয়ে নন-কটন পোশাক পছন্দ করে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *