এপ্রিল ২৯, ২০২৪

আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমে আসবে। পাশাপাশি এ খাতটিতে সুশাসন ফিরবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

গভর্নর বলেন, নির্বাচনের পর দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক অবস্থারও উন্নতি হয়েছে। আশাকরছি অর্থনীতির এই স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।

তিনি বলেন, আমদানি ও রপ্তানির সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো জড়িত থাকে। বাণিজ্যের এসব ডলার তাদের নস্ট্রো একাউন্টে থাকছে। রেমিট্যান্সের পুরো ডলারও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে আসে না। যেসব ব্যাংক ডলার সংকটে রয়েছে তাদেরকে রিজার্ভ থেকে ডলার দিচ্ছি। অপরদিকে বাজারে তারল্য সংকটও রয়েছে। এজন্য যেসব ব্যাংকে অতিরিক্ত ডলার রয়েছে তাদেরকে সোয়াপের মাধ্যমে ডলার রেখে টাকা দিচ্ছি। কিছু মানুষ ডলার কিনে বালিশের নিচে রেখে দিয়েছিলো। সেগুলো এখন বের হয়ে আসছে।

এছাড়াও তিনি বলেন, অফিশিয়ালি সব ধরনের ডলারের দাম বর্তমানে একই। খোলাবাজারে বছরে ক্যাশ ডলার বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলার। অপরদিকে ব্যাংক খাতে এক বছরে ২৭০ বিলিয়ন ডলারের লেনদেন হয়।

সেমিনারে দেশের মূল্যস্ফীতি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরো সফলতার সাথে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিন আহমেদ।

কিন্তু কিছু মিল মালিক ও অসাদু কর্মকর্তার কারণে বাজারের মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হচ্ছে না বলেও মনে করছেন সাবেক এ গভর্নর। তিনি বলেন, প্রায় ব্যর্থ সরকারের শস্য সংগ্রহ অভিযান। নির্ধারিত দামে সরকার শস্য কিনতে পারছে না কিন্তু ব্যাকডোর দিয়ে কম দামে শস্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন এসব অসাধু মিল মালিকরা। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের দেশের চাষী ভাইয়েরা। এই সমস্যা সমাধানে সরকারি শস্য সংগ্রহের গুদাম ঘরের পরিধি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

১৯৭৪ সালের উদাহরণ দিয়ে ফরাসউদ্দীন বলেন, ১৯৭৪ সালের মহা দুর্ভিক্ষের অন্যতম কারণ ছিল কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্তভোগী। কিন্তু সরকারের খাদ্য ভান্ডার থেকে সারাদেশে প্রায় বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহের কারণে সে সময় আমরা দুর্ভিক্ষ কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম। এই মুহূর্তে মধ্যস্বত্বভোগী ও মিল মালিকদের দৌরাত্ম কমাতে সরকারি গুদাম ঘরের ধারনক্ষমতা ৩০ লাখ টনে উন্নীত করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

যেকোনো মূল্যে সরকারি খাদ্যশস্য সংগ্রহের পরিমাণ ২৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করতে হবে বলেও জানান তিনি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মধ্যসত্তভোগীদের অস্ত্র দিয়েই তাদেরকে ঘায়েল করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

সাবেক এ গভর্নর আরও বলেন সরকারের প্রণোদনা নিয়ন্ত্রণ করা আরো জরুরি। কারণ বর্তমান প্রণোদনার বেশি ভাগ রাঘব বোয়ালদের এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের পেটে যাচ্ছে। আমাদের দেশে ইউনিফাইড এক্সচেঞ্জ রেট হওয়া দরকার। পাশাপাশি কার্ব মার্কেটের সাথে এটার পার্থক্য তিন থেকে চার টাকার বেশি থাকবে না। কিন্তু ১২ থেকে ১৩ টাকা পার্থক্য মোটেও কাম্য নয় বলে মনে করেন তিনি।

মূল্যস্ফীতি, বিনিময় হার এবং সুদ হার নিয়ন্ত্রণ করাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল কাজ। কিন্তু এই কাজগুলো কতটুকু সফলভাবে হচ্ছে তার সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরো সফলতার সাথে কাজ করতে হবে। বর্তমানে আমাদের দেশে ৩ কোটির অধিক মানুষ দরিদ্র সীমার নীচে রয়েছে। মূল্যস্ফীতি বাড়লে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তারাই। ক্রয় ক্ষমতা যাদের কম তারা মূল্যস্ফীতিতে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে সামান্য মূল্যস্ফিতি কমার কারণে অতিরিক্ত উল্লাস করার কিছু নেই। এটা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরো শক্ত হাতে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক এই গভর্নর।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *