মে ১৭, ২০২৪

জুয়েলারি শিল্পের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। একই সঙ্গে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থ-বছরের বাজেটে জুয়েলারি পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে আরোপিত ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ, অপরিশোধিত আকরিক সোনায় আরোপিত সিডি ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১ শতাংশ ও আংশিক পরিশোধিত সোনার সিডি ১০ শতাংশের পরিবর্তে আইআরসি ধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের শুল্কহার ৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিতে বাজুস কার্যালয়ে ২০২৩-২৪ অর্থ-বছরের বাজেট উপলক্ষ্যে আয়োজিত প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর। আরও উপস্থিত আছেন বাজুসের সহ-সভাপতি ও স্ট্যাডিং কমিটি অন ট্যারিফ এন্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, বাজুসের সহ-সভাপতি রিপনুল হাসান, বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল, বাজুসের সহ-সম্পাদক ও স্ট্যাডিং কমিটি অন ট্যারিফ এন্ড ট্যাক্সেশনের ভাইস চেয়ারম্যান সমিত ঘোষ অপু, স্ট্যাডিং কমিটি অন ট্যারিফ এন্ড ট্যাক্সেশনের সদস্য সচিব পবন কুমার আগরওয়াল।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশের মহান স্থাপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণে ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ২০৪১ সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাজুসের বর্তমান নেতৃত্ব বদ্ধপরিকর। বাজুস মনে করছে- আগামী দিনে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে জাগরণ তুলবে জুয়েলারি শিল্প।

বর্তমানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ্যভাবে জুয়েলারি শিল্পে আনুমানিক ৪৪ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। আগামীতে এই শিল্পে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে জুয়েলারি শিল্পে ভ্যালু এডিশন করে সোনার অলঙ্কার রপ্তানি সম্ভব। দুবাই যেমন সোনার ব্যবসার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে, তেমনি বাংলাদেশেও এই সম্ভাবনা রয়েছে। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন ছিল জাতির পিতার। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে জুয়েলারি শিল্পে করমুক্ত সুবিধা চাই। সত্যিকারের সোনার বাংলাদেশ গড়তে জুয়েলারি শিল্পে সকল সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।

দেশের প্রাচীন শিল্পের মধ্যে অন্যতম জুয়েলারি খাত। বর্তমানে চরম সঙ্কটে দিশেহারা এই জুয়েলারি শিল্পের জন্য প্রয়োজন সরকারের নীতি সহায়তা। অপার সম্ভাবনা থাকার পরও, সুষ্ঠু রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও নীতি সহায়তার অভাবে জুয়েলারি শিল্প এখন হুমকির মুখে পড়েছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের ২০২২ সালের প্রতিবেদন মোতাবেক বিশ্ব বাজারে সোনার চাহিদা ছিল ৪ হাজার ৭৪০ টন। এরমধ্যে সোনার অলংকারের চাহিদা ২ হাজার ১৮৯ দশমিক ৮ টন।

বাংলাদেশে সোনার বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৪০ টন। তবে প্রকৃত চাহিদা নিরূপণে সরকারের সমীক্ষা প্রয়োজন। বৈধভাবে সোনার চাহিদা পূরণ করার ক্ষেত্রে বড় বাঁধা কাঁচামালের উচ্চমূল্য, অতিরিক্ত উৎপাদন ব্যয়, শিল্প সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতির উচ্চ আমদানি শুল্ক। বর্তমানে জুয়েলারি শিল্পের প্রায় সকল ধরণের পণ্য ও যন্ত্রপাতির আমদানি শুল্ক ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ। যা স্থানীয় অন্যান্য শিল্পে আরোপিত শুল্কের চেয়ে অনেক বেশি। এতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি ৫ শতাংশ হারে উচ্চ ভ্যাট হার ও অতিরিক্ত উৎপাদন খরচের কারণে ভোক্তা পর্যায়ে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে দামের পার্থক্য হচ্ছে। এতে ক্রেতা হারাচ্ছেন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা। আর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ছোট ছোট জুয়েলারী ব্যবসায়ী।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এমন সঙ্কটেও আমরা সম্ভাবনার খবর হচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বেসরকারিভাবে এই প্রথম সোনা পরিশোধনাগার স্থাপন হয়েছে। বিশ্ব বাজারে আর কিছুদিন পর রপ্তানি হবে ‘মেইড ইনবাংলাদেশ’ লেখা সোনার বার ও অলংকার। কিন্তু এই পরিশোধনাগার স্থাপনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির আমদানি শুল্ক অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে প্রাথমিক পর্যায়েই উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। এই নেতিবাচক প্রভাব পড়ার ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নীতি নির্ধারকদের উপর অনেকখানি দায় বর্তায়। অবাস্তব নীতি প্রণয়ন, শুল্ক নির্ধারণে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের গোঁড়ামি, ভ্যাট ও আয়কর কর্মকর্তাদের কর্তৃক ব্যবসায়িদের হয়রানি এবং আমদানির ক্ষেত্রে কাস্টমস সদস্যদের ক্ষমতার অপব্যবহার এই শিল্পের সঙ্গে সংযুক্ত ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি ও আতঙ্কের প্রধান কারণ। এতে সরকার প্রত্যাশিত রাজস্ব আয় থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।

বাজুস মনে করে- বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতায় সক্ষম করতে জুয়েলারি খাতে আরোপিত শুল্ককর ও ভ্যাট হার কমানো এবং আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। এতে যেমন সরকারের বৈদেশিক আয় আসবে। তেমনি বাড়বে রাজস্ব আয়। বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের আরেকটি খাত তৈরি হবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *