মে ১৯, ২০২৪

বেশ কিছুদিন ধরে রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলারের ব্যবহার কমছে। ইউরো ও চীনা ইউয়ানের হিস্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় রিজার্ভে ডলারের চাহিদা কমছে। সেই সঙ্গে অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ হিসেবে স্বর্ণ কেনার পরিমাণ বাড়িয়েছে। সম্প্রতি ইয়াহু ফাইন্যান্সের এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

ইয়াহু ফাইন্যান্সের জানায়, গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও ডলারের বাড়তি দরের কারণে বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রার ভান্ডারে ডলারের হিস্যা ৪৭ শতাংশে নেমে এসেছে; আগের বছর, অর্থাৎ ২০২১ সালে যা ছিল ৫৫ শতাংশ। অথচ ২০০০ সালে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর রিজার্ভে ডলারের হিস্যা ছিল ৭১ শতাংশ।

বিশ শতকের গোড়া থেকেই মার্কিন ডলার বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুদ্রা। সাধারণত মার্কিন অর্থনীতি খুব শক্তিশালী কিংবা খুব দুর্বল থাকলে ডলারের মূল্য বাড়ে। গত বছর মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্য ২০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের বিপরীতে সোনা ও অন্যান্য মুদ্রায় রিজার্ভ রাখা শুরু করে।

অন্যদিকে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ভিটিবির প্রধান নির্বাহী আঁদ্রেই কোস্তিন বলেন, মার্কিন ডলারের আধিপত্যের দিন শেষ হয়ে আসছে। কারণ হিসেবে তিনি চীনা মুদ্রা ইউয়ানের উত্থান ও রাশিয়াকে বাগে আনার পশ্চিমা ব্যর্থ চেষ্টার কথা উল্লেখ করেছেন। সেই সঙ্গে বিশ্ববাসী পশ্চিমের এই ব্যর্থ চেষ্টার ঝুঁকির মুখে পড়ে গেছে। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, মার খাচ্ছে বিশ্বায়ন। অন্যদিকে, চীন বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির ঝান্ডা তুলে নেওয়ার দিকে এগোচ্ছে।

এদিকে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের দেশে থাকা রাশিয়ার অনেক সম্পদ জব্দ করেছে। কোস্তিন মনে করেন, এ পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মার খাবে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অনেক দেশ এখন ডলারের বিকল্প হিসেবে অন্যান্য মুদ্রায় বাণিজ্য করছে এবং চীন মুদ্রার ওপর নিষেধাজ্ঞার নীতি থেকে সরে আসছে। চীন বুঝতে পারছে, ইউয়ানকে রূপান্তর-অযোগ্য মুদ্রা হিসেবে রেখে তাদের পক্ষে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি হওয়া সম্ভব নয়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌম বন্ডে রিজার্ভ বিনিয়োগ করে রাখা চীনের জন্য বিপজ্জনক।

কোস্তিন বলেন, পশ্চিমাদের চাপে রুশ অর্থনীতি ভেঙে পড়বে না। এপ্রিল মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চলতি বছরের জন্য রাশিয়ার প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ করেছে। যদিও ২০২৪ সালের জন্য পূর্বাভাস ২ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ দশমিক ৩ শতাংশ করেছে।

এই শীর্ষ ব্যাংকার আরও বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা খারাপ বিষয়, সে কারণে আমাদের ভুক্তভোগী হতে হয়; যদিও আমাদের অর্থনীতি খাপ খাইয়ে নিতে শিখেছে। একই সঙ্গে আমরা ধারণা করছি, নিষেধাজ্ঞার তীব্রতা আরও বাড়বে, আরও অনেক পথ বন্ধ করা হবে। তবে আবার আমরা অন্য পথ খুঁজে নেব।’

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *