মে ৯, ২০২৪

চলতি ডিসেম্বরে চীনে শুরু হওয়া করোনা সুনামির জেরে কয়েকদিন আগে দেশটি থেকে আগত যাত্রীদের জন্য করোনাবিধি কঠোর করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও ইতালি। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো আরও চার দেশ— ফ্রান্স, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইসরায়েল।

শুক্রবার ফ্রান্সের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক নোটিশে বলা হয়েছে, চীন থেকে ফ্রান্সের আসতে ইচ্ছুক যাত্রীদেরকে অবশ্যই উদ্দেশে বিমানে ওঠার অন্তত ৪৮ ঘণ্টা আগে করোনার পিসিআর টেস্ট করাতে হবে এবং ফ্রান্সের বিমানবন্দরে সেই টেস্ট প্রদর্শন করতে হবে। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এ নিয়ম কার্যকর করা হবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কেবলমাত্র করোনা নেগেটিভ সনদধারী যাত্রীদের এয়ারপোর্ট থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।

একই দিন স্পেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্যারোলিনা দারিয়াস সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আগামী ১ জনুয়ারি থেকে চীন থেকে আগত সব যাত্রীকে অবশ্যই স্পেনের বিমানবন্দরে নামার পর বাধ্যতামূলক করোনা টেস্ট করাতে হবে। তবে যেসব যাত্রী স্পেনের সরকারের স্বীকৃত করোনা টিকার দুই ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন, তারা এক্ষেত্রে ছাড় পাবেন।

শুক্রবার এক সরকারি বিবৃতিতে চীনের যাত্রীদের জন্য একই নির্দেশনা জারি করেছে যুক্তরাজ্যও।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ২০২৩ সালের জানুয়ারির প্রথম দিন থেকে চীন থেকে দক্ষিণ কোরিয়া এসে পৌঁছানো সব যাত্রীকে অবশ্যই করোন নেগেটিভ সনদ সঙ্গে রাখতে হবে এবং বিমানবন্দরে নামার পর ফের করোনার পিসিআর টেস্ট করাতে হবে।

এদিকে যেসব বিমান পরিষেবা সংস্থা চীন-ইসরায়েল রুটে যাত্রীসেবা প্রদান করে, সেসব সংস্থার উদ্দেশে শুক্রবার নতুন নির্দেশনা দিয়েছে ইসরায়েলের সরকার। সেখানে বলা হয়েছে, চীনের যেসব যাত্রী করোনার নেগেটিভ পিসিআর রিপোর্ট প্রদর্শনে ব্যর্থ হবেন, তাদেরকে যেন বিমানে উঠতে না দেওয়া হয়।

অবশ্য সব দেশই যে চীনা যাত্রীদের জন্য বিধিনিষেধে কঠোরতা আনছে— এমন নয়। জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোনো বিশেষ দেশের যাত্রীদের জন্য বিধিনিষেধ কঠোর করার পরিকল্পনা আপাতত তাদের নেই।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে বিশ্বের প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটিও ঘটেছিল চীনে।

তারপর অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

কিন্তু তাতেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় অবশেষে ওই বছরের ১১ মার্চ করোনাকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকে মহামারি ঘোষণার পর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো চীনেও দীর্ঘ লকডাউন, সামাজিক দূরত্ববিধি, বাড়ির বাইরে গেলে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরা, কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশনসহ কঠোর সব করোনা বিধি জারি করেছিল।

গত ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে অধিকাংশ দেশ করোনা বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া শুরু করলেও চীন তার আগের অবস্থানে অনড় ছিল চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত। করোনার বিরুদ্ধে চীন সরকারের এই কঠোর অবস্থান পরিচিতি পায় ‘জিরো কোভিড’ নীতি হিসেবে।

তার সুফলও অবশ্য পাওয়া যাচ্ছিল। মহামারির দুই বছরে যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেখানে লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত ও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে— সেখানে চীনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী এই সময়সীমার মধ্যে দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ৩৩ হাজারের কিছু বেশি মানুষ এবং মৃত্যু ছিল এক হাজারের কিছু ওপরে।

কিন্তু আড়াই বছরেরও বেশি সময়ে কঠোর করোনাবিধির মধ্যে থাকার জেরে অতিষ্ঠ চীনের সাধারণ জনগণ গত নভেম্বরের শেষদিকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করে। জনগণের এই বিক্ষোভের পর চলতি ডিসেম্বরের প্রথম দিকে ‘জিরো কোভিড’ নীতি থেকে সরে আসে দেশটির সরকার।

তার পর থেকেই দেশটিতে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যায় উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন, হাসপাতালগুলো করোনা রোগীদের ভিড়ে উপচে পড়ছে এবং অনেক ওষুধের দোকানে করোনার ওষুধের যোগান শেষ হয়ে গেছে।

চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিএফ পয়েন্ট সেভেন নামের একটি করোনাভাইরাস সাম্প্রতিক এই ঢেউয়ের জন্য দায়ী। এই ভাইরাসটি করোনার সবচেয়ে সংক্রামক ধরন ওমিক্রনের একটি উপপ্রজাতি।

তবে করোনার সাম্প্রতিক এই ঢেউ সম্পর্কে চীনের সরকার তেমন কোনো তথ্য প্রকাশ করছে না। গত ২৮ ডিসেম্বর দেশটির সরকারি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে ২০২০ সালে মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত চীনে করোনায় মৃত্যু হয়েছে মোট ৫ হাজার ২৪৬ জনের।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *