মে ১৯, ২০২৪

সম্প্রতি দেশের বেশকিছু ব্যাংকের ঋণ অনিয়ম ও জালিয়াতির তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। যার প্রভাবে দেশীয় ব্যাংকগুলোর ওপর গ্রাহকদের আস্থা কমেছে। এর ফলে দেশের ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর আমানত প্রতিমাসে গড়ে ১০০ কোটি টাকা কমছে। অপরদিকে গ্রাহকেরা বিদেশি ব্যাংকে আমনত রাখার পরিমাণ বাড়িয়েছে। দেশে পরিচালিত বিদেশি ব্যাংকগুলোতে চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক তফসিলি ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাস (জানুয়ারি-মার্চ) শেষে দেশের ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর আমানতের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক দশমিক ০৯ শতাংশ। মার্চ প্রান্তিকে ইসলামী ব্যাংকগুলোর আমানত হয়েছে ৩ লাখ ৫৫ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। ডিসেম্বর প্রান্তিকে যার পরিমাণ ছিলো ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের প্রান্তিকের তুলনায় এসব ব্যাংকের আমানত কমেছে ৩০৭ কোটি টাকা।

ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, দেশের বেসরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো আমানতে সুদের হার বেশি দেয়। সেই তুলনায় বিদেশি ব্যাংকগুলো আমানতে কম সুদ দেয়। এরপরেও দেশীয় ব্যাংকের তুলনায় বিদেশি ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ বাড়ছে। সম্প্রতি বেশকিছু রাষ্ট্রায়ত্ব ও বেসরকারি ব্যাংকের ঋণ অনিয়মের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। এর ফলে দেশীয় ব্যাংকে অনেক গ্রাহকের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। তাই তারা বিদেশি ব্যাংকগুলোতে আমানত রাখছে।

এদিক মার্চ প্রান্তিকে ৯টি বিদেশি ব্যাংক ৭৮ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা আমানত করেছে। এর আগের তিন মাসে এর পরিমাণ ছিলো ৭৩ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের প্রান্তিকের চেয়ে মার্চে বিদেশি ব্যাংকে আমানত বেড়েছে ৪ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা।

বিদেশি ব্যাংকগুলোর পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমানত প্রবৃদ্ধি পেয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে আমানতের পরিমাণ ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪ লাখ ৬ হাজার ৮৫২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

এছাড়া আমানত প্রবৃদ্ধির তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে দেশের বেসরকারি বাণিজ্যক ব্যাংকগুলো। মার্চ প্রান্তিকে এসব ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ ১ দশমিক ৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১০ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকা ৬৪৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে আমানত কমার বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি অর্থসূচককে বলেন, ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর অব্যবস্থাপনার কারণে আমানত কমছে। এছাড়া এক মালিকানায় এতগুলো ইসলামিক ব্যাংক থাকার কারণে অনেক ক্ষতি করে ফেলছে। এর ফলে গ্রাহকেরা আস্থা হারিয়ে ফেলছে। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বিদেশি ব্যাংকে আস্থা বাড়ছে গ্রাহকদের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ইসলামি ব্যাংকগুলোর আমানত প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালের মার্চ প্রান্তিকে ছিলো নেতিবাচ দশমিক ১৭ শতাংশ। এই প্রান্তিকে আমানত ছিলো ৩ লাখ ৪৯ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। এরপর জুন প্রান্তিক শেষে ইসলামি ব্যাংকগুলোর আমানত ছিল ৩ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। ওই সময়ে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আমানত প্রবৃদ্ধি হয়েছিলো ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। তবে ডিসেম্বর প্রান্তিকে আমানতের প্রবৃদ্ধি আবারও নেতিবাচক ২ দশমিক ৯০ শতাংশ হয়েছিলো। ডিসেম্বর শেষে তাদের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিলো ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকেও ব্যাংকগুলোর আমানত প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *