ইরানে ৪০০ জনকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তরা সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ইরানের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের রাজধানী তেহরানের একটি আদালত সরকারবিরোধী বিক্ষোভে গ্রেপ্তার হওয়া ৪০০ জনকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দিয়েছে বলে দেশটির একজন বিচার বিভাগের কর্মকর্তা বলেছেন।
ইরানের বার্তাসংস্থা মিজান বলেছে, আদালতের রায়ে ১৬০ জন দাঙ্গাকারীকে পাঁচ থেকে ১০ বছরের মধ্যে, ৮০ জনকে দুই থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে এবং ১৬০ জনকে দুই বছর বা তার কম সময়ের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া আরও ৭০ জনকে জরিমানা করা হয়েছে বলে আলী আলকাসিমেহর জানিয়েছেন। তবে তাদের বিষয়ে বিস্তারিত কোনও বিবরণ প্রদান করা হয়নি।
মূলত দেশে অস্থিরতার জন্য দোষী সাব্যস্ত দ্বিতীয় অভিযুক্তকে ইরানি কর্তৃপক্ষ ফাঁসি দেওয়ার একদিন পরে এই চারশো জনের বিরুদ্ধে কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হলো। গত সোমবার সকালে ইরানের বিচার বিভাগ জানায়, ২৩ বছর বয়সী মাজিদ্রেজা রাহনাভার্ডের মৃত্যুদণ্ড উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর মাশহাদে জনসমক্ষে কার্যকর করা হয়েছে।
অবশ্য গত সেপ্টেম্বর মাস থেকেই বিক্ষোভে টালমাটাল ইরান। হিজাব পরার বিধান লঙ্ঘনের দায়ে গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে ইরানের নৈতিকতা পুলিশ ২২ বছর বয়সী কুর্দি ইরানি তরুণী মাহসা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশি হেফাজত থেকে কোমায় নেওয়া হয় এই তরুণীকে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মাহসা আমিনি।
সংবাদমাধ্যম বলছে, মাহসা আমিনিকে তেহরানে নৈতিকতা পুলিশ তার চুল সঠিকভাবে না ঢেকে রাখার অভিযোগে আটক করেছিল। তার মৃত্যুর পর থেকেই ইরানজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে।
ইরানের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ওই তরুণী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তবে ভুক্তভোগীর পরিবার এই বিষয়ে বিরোধিতা করে বলেছে, তাকে নৈতিকতা পুলিশ মারধর করেছে।
বিবিসি এর আগে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, নারী-নেতৃত্বাধীন এই বিক্ষোভ ইরানের ৩১টি প্রদেশের ১৫০টিরও বেশি শহর এবং ১৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর থেকে এটিকে পশ্চিম এশিয়ার এই ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট নিউজ এজেন্সির (এইচআরএএনএ) তথ্য অনুসারে, বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে ইরানে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৯০ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৬৮ জন শিশু। এছাড়া বিক্ষোভ-সহিংসতায় ৬২ জন নিরাপত্তা কর্মীও নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
একই সময়ে বিক্ষোভের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৮ হাজার ২০০ জনেরও বেশি লোককে গ্রেপ্তারের খবর দিয়েছে সংস্থাটি। যাদের মধ্যে ৩ হাজার ৭৮০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
অবশ্য দেশব্যাপী ঠিক কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা ইরানি কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করেনি।