ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

গত ২১ জুন ভোট শেষে নির্বাচন ভবনে ‘একজন মেয়র প্রার্থীকে রক্তাক্ত করা হলেও এ নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ বলা যায় কি না?’-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, ‘এটা আপেক্ষিক। রক্তাক্ত সব কিছু আপেক্ষিক, উনি কি ইন্তেকাল করেছেন? আমরা দেখছি-না, উনি কি কতটা… উনার রক্তক্ষরণটা দেখিনি। যতটা শুনেছি-উনাকে কেউ পেছন থেকে ঘুষি মেরেছে। উনিও বলেছেন, ভোট বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না, তাকে আক্রমণ করা হয়েছে।’ দু’চারটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সার্বিকভাবে সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও আনন্দমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে বলে জানিয়ে ছিলেন সিইসি।

এদিকে মুফতি ফয়জুল করীমকে নিয়ে সিইসির ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ মন্তব্যে নিজের মানহানি হয়েছে উল্লেখ করে তার জন্য ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ইতোমধ্যে উকিল নোটিশও পাঠিয়েছেন।

এদিকে আজ ইসি সচিবালয়ের জনসংযোগ পরিচালক শরিফুল আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সিইসির কোনো মন্তব্যে কেউ মর্মাহত হেলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

এতে বলা হয়, গত ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন সাধারণ নির্বাচন-২৩ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর আনুমানিক বিকেল ৫টায় উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে হাতপাখা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদপ্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের ওপর হামলা ও রক্তাক্ত করার বিষয়ে সাংবাদিকদের উপর্যুপরি প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সঙ্গে গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট হতে বর্ণিত প্রার্থীর বর্তমান শারীরিক অবস্থা সংক্রান্ত তথ্য জানতে চেয়েছেন। ওই বিষয়টি বিকৃতভাবে ও ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বর্ণিত প্রার্থীকে কটাক্ষ করেছেন এবং তাঁর মৃত্যু কামনা করেছেন মর্মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি এ বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দও নির্বাচন কমিশনকে হেয় প্রতিপন্ন করে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য প্রদান করছেন মর্মে নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছেন।

প্রকৃত বিষয় হলো বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বর্ণিত প্রার্থীর ওপর আক্রমণ হওয়ার ঘটনা অবহিত হওয়া মাত্রই প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারগণ দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তাগণকে নির্দেশনা প্রদান করেন। নির্বাচন কমিশনের উক্ত নির্দেশনার আলোকে বরিশাল জেলা প্রশাসন ও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ তদন্তপূর্বক বর্ণিত বিষয়ে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করত: আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন মর্মে ১৪ জুন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রতিবেদন প্রেরণ করেছেন। ওই প্রতিবেদনসমূহ পর্যালোচনায় দেখা যায়, ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে মো. মঈনুল ইসলাম স্বপন ও মো. জহিরুল ইসলাম রেজভীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় উপর্যুক্ত ব্যক্তি ছাড়াও অন্যান্য অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের ভিডিও ফুটেজ ও সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে শনাক্তকরণসহ পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে এবং উক্ত বিষয়টি নির্বাচন কমিশন সার্বক্ষণিক তদারকি করে যাচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বাংলাদেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সাথে এবং কোনো রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর প্রতি অনুরাগ বা বিরাগভাজন না হয়ে তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি কখনো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের মেয়র পদপ্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের সুনাম ও সম্মানের হানিঘটে এমন কোনো মন্তব্য করেননি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বর্ণিত প্রার্থীর মৃত্যু কামনা করেছেন মর্মে প্রচারিত সংবাদ ও বক্তব্য সম্পূর্ণ অলীক, মনগড়া, অনুমাননির্ভর ও ভ্রান্তধারণাপ্রসূত। উক্তরূপ অসত্য সংবাদ ও বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশ করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।

এতে আরও বলা হয়, তদুপরি, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কোনো মন্তব্য/বক্তব্যে কোনো ব্যক্তি মর্মাহত হলে তিনি (সিইসি) তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সর্বোপরি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন প্রত্যাশা করে যে, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যম কর্মীগণ সবোর্চ্চ সতর্কতা ও দায়িত্বশীলতার সাথে নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত যে কোনো বক্তব্য ও সংবাদ প্রদান ও প্রচার করবেন এবং বর্ণিত অনুমাননির্ভর ও ভ্রান্তধারণাপ্রসূত মন্তব্য ও সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ হতে বিরত থাকবেন।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...