নানা প্রতিবন্ধকতা আর শঙ্কার মধ্যেই ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে পণ্য রফতানি দিয়েই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। চলতি বছর প্রথম ৬ মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়াও যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়া, জাপান, কানাডা ও চীনে ২ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকার পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা সাড়ে ৩১ হাজার কোটি টাকা বেশি। তৈরি পোশাক খাতের রফতানি কিছুটা কমলেও পাটজাত দ্রব্য, জুতা এবং কুটিরশিল্প পণ্যে তা কাটিয়ে ওঠেছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২ লাখ ২৭ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা মূল্যের ২৪ লাখ ২৬ হাজার মেট্রিক টন পণ্য রফতানি হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ শিল্পোন্নত ৬টি দেশে। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩২২ কোটি টাকা মূল্যের ১৯ লাখ ৯২ হাজার মেট্রিক টন পণ্য।
রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে ১ লাখ কোটি টাকার পণ্য পাঠানো হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ৩৭ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা এবং যুক্তরাজ্যে ২৩ হাজার ২৮৯ কোটি টাকার পণ্য রফতানি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সী বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রফতানি বেড়েছে প্রায় ৮ শতাংশের বেশি। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশের বেশি। এতে পরিমাণের দিক থেকে ২১ শতাংশ এবং মূল্যের দিক থেকে ১৫ শতাংশ বেড়েছে রফতানি।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং নানা জটিলতায় ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি নিয়ে যে সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল, তা কাটতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল।
তিনি বলেন,এসব দেশে পণ্য রফতানি করেই গত ৬ মাসে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবৃদ্ধি হয়েছে অন্তত ২২ শতাংশ। টাকার অংকে যা ৩২ হাজার কোটি টাকার মতো বেশি। সূত্র সময়টিভি।
এদিকে, গত বছর ১৯টি অফডকে ৮ লাখ ৭৮ হাজার কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। এর মধ্যে রফতানি পণ্যবাহী কন্টেইনার ছিল ৬ লাখ ৬১ হাজার। মূলত অর্থ বছরের শুরুর স্থবিরতা কাটিয়ে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের প্রবৃদ্ধি ছিলো রেকর্ড পরিমাণ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে গার্মেন্টস শিল্পের পণ্য রফতানি কমলেও সে জায়গা দখল করছে অন্য পণ্য – এমনটিই বলছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ও বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা)।
বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বিপ্লব বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসের চেয়ে পরবর্তী তিন মাসের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক।
বিজিএমইএর সহ-সভাপতি রাকিব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দেশের কুটির শিল্প, হস্তশিল্প পণ্যগুলো ইউরোপ-আমেরিকায় রফতানি হচ্ছে। পাশাপাশি বাড়ছে পোশাক রফতানিও। যা রফতানি প্রবৃদ্ধি বাড়াচ্ছে।
উল্লেখ্য, জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে ১৮০ কোটি টাকা মূল্যের ৩ হাজর ৪৩২ মেট্রিক টন পাট ও পাটজাত দ্রব্য রফতানি হয়েছে। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হিসাবে ৫৭ কোটি টাকা বেশি।