আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতারণা, শেয়ার দরে কারচুপির অভিযোগ ওঠার পর আদানিদের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার সঙ্গে ঘনিষ্টতার বিষয়েও কোনো কথা বলেননি মোদি।
তবে এ বিষয়ে এই প্রথম মুখ খুললেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। গৌতম আদানির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্নের মুখে অমিত শাহ বলেন, এ বিষয়ে বিজেপির লুকোনোর কিছু নেই। এ নিয়ে ভয় পাওয়ারও কোনো কারণ নেই, হাজার বার ষড়যন্ত্র করেও সত্য বদলানো যায় না।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই দাবির পরেই বিরোধী শিবির প্রশ্ন তুলেছে, আদানির বিষয়ে সরকারের যদি কিছুই লুকোনোর না থাকে, তা হলে জেপিসির (যৌথ সংসদীয় কমিটি) তদন্ত থেকে পালাচ্ছে কেন? কেন সংসদে এই প্রসঙ্গটাই তুলতে দেওয়া হচ্ছে না?
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ সংস্থা প্রতারণা ও শেয়ার দরে কারচুপির অভিযোগ তোলার পরে বিরোধীরা সংসদে জেপিসি তদন্তের দাবি তুলেছিলেন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি এ নিয়ে লোকসভা বা রাজ্যসভায় একবারও মুখ খোলেননি।
রাহুল গান্ধীর অভিযোগের জবাবে অমিত শাহ বলেছেন, উনি বক্তব্যে কী বলবেন, সেটা উনি ঠিক করবেন। ওর বক্তব্য-লেখকেরা ঠিক করবেন। তবে এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। আজ পর্যন্ত কেউ বিজেপির বিরুদ্ধে এ সব অভিযোগ তুলতে পারেনি।
আদানি নিয়ে অমিত শাহের যুক্তি, সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই এই বিষয়টি দেখছে। তাই তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে কিছু বলতে চান না।
মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের মতো প্রতিষ্ঠান করায়ত্ত করার অভিযোগ এনেছেন বিরোধীরা। এর জবাবে অমিত শাহ বলছেন, আদালত আমাদের কব্জায় নেই। বিরোধীদের হাতে কোনো প্রমাণ থাকলে তারা আদালতে যাচ্ছেন না কেন?
এখানেই সরকার পালানোর পথ খুঁজছে বলে বিরোধীরা মনে করছেন। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের যুক্তি, হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার দরে ধস নামায় সুপ্রিম কোর্টে হিন্ডেনবার্গের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি করে জনস্বার্থে মামলা হয়েছে। অভিযোগ তোলা হয়েছে, হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টের পরে শেয়ার বাজারে লগ্মিকারীরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। তাই এর পেছনে ষড়যন্ত্রের তদন্ত হোক। সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিলে মোদি সরকার তাতেও সায় দিয়েছে।
এখানেই মোদি সরকার কৌশলে আদানিদের তদন্ত থেকে আড়াল করতে চাইছে বলে কংগ্রেস মনে করছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, তদন্ত তো আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হওয়া উচিৎ। হিন্ডেনবার্গের বিরুদ্ধে নয়। এই যে সুপ্রিম কোর্টের কমিটির কথা বলা হচ্ছে সে তো হিন্ডেনবার্গের বিরুদ্ধে তদন্তের জনস্বার্থ মামলার ভিন্তিতে।
জয়রাম রমেশের যুক্তি, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ই বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট নয়, সংসদ সর্বোচ্চ। এ ক্ষেত্রে তা হলে মোদি সরকার কেন সংসদীয় কমিটির বদলে সুপ্রিম কোর্টের কমিটিকে দায়িত্ব দিতে চাইছে!
বাজেট অধিবেশনের প্রথমার্ধে কংগ্রেসসহ বিরোধীরা জেপিসির দাবিতে সরব ছিলেন। ১৩ মার্চ থেকে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে। বিরোধী শিবির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখনও ফের জেপিসির দাবি তোলা হবে। বিরোধীদের যুক্তি, মোদি সরকারের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর কী সম্পর্ক, বিশেষত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শিল্পপতি গৌতম আদানির কী সম্পর্ক, কীভাবে আদানিদের সুবিধা করে দেওয়া হয়েছে, তা শুধু জেপিসি হলেই জানা সম্ভব। কংগ্রেসের প্রশ্ন, সেই সংসদীয় কমিটিতেও বিজেপির সাংসদদের সংখ্যা বেশি থাকবে। তারপরও বিজেপি তথা মোদি সরকার রাজি হচ্ছে না কেন?
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ সেবির চেয়ারম্যান ও রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি লিখে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতারণা, কারচুপির অভিযোগের তদন্ত দাবি করেছেন।
রাহুল গান্ধী লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আদানির সম্পর্ক নিয়ে অভিযোগ তোলায় বিজেপির পক্ষে তার বিরুদ্ধে সংসদের স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তার দাবি, ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলার জন্য রাহুল গান্ধীর সদস্য পদ কেড়ে নেওয়া উচিত।
এ বিষয়ে জয়রাম রমেশ বলছেন, ঝাড়খণ্ডের ওই বিজেপি সাংসদের লোকসভা কেন্দ্রে আদানি গোষ্ঠীর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। সে কারণেই তিনি অতিরিক্ত সক্রিয়। আদানিদের নাম করলেই সংসদের রেকর্ড থেকে মুছে দেওয়া হচ্ছে বলে লোকসভার স্পিকার, রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের ভূমিকা নিয়েও বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন।
অমিত শাহ এর জবাবে বলেছেন, সংসদের রেকর্ড থেকে আগেও এমন অনেক অভিযোগ মুছে দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসের বক্তব্য, এখন সংসদে যা চলছে, তা নিয়ম মেনে হচ্ছে না। বিরোধীদের ভয় দেখানো, হুমকি দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে কংগ্রেসসহ বিরোধীদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে।