ডলার সংকটের মধ্যে রেমিট্যান্স বাড়ানোর বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরেও রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে। চলতি মে মাসের প্রথম ১২ দিনে ৭৭ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে প্রবাসীরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি ডলার ১০৮ টাকা ধরে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৮ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
তথ্য অনুযায়ী, আলোচ্য সময়ে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে প্রবাসীরা। এসব ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৬২ কোটি ১৯ লাখ ডলার। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১২ কোটি ২২ লাখ ডলার। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৩৬ লাখ মার্কিন ডলার ও বিশেষায়িত এক ব্যাংকের মাধ্যমে ২ কোটি ৬১ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
এদিকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৭৭১ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। দেশীয় মুদ্রায় প্রতি ডলার ১০৭ টাকা ধরে যার পরিমাণ ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিলো ১ হাজার ৭৩০ কোটি ডলার।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) পরপর ২০০ কোটিরও বেশি ডলারের রেমিট্যান্স আসে। এরপর টানা চার মাস রেমিট্যান্স প্রবাহ নেতিবাচক ছিলো। চলতি ২০২৩ সালের শুরুতে আবারও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে শুরু করে। গত মার্চ মাসে প্রবাসী আয় ছাড়িয়েছিল ২০০ কোটি ডলার। তবে বিদায়ী মাস এপ্রিলে প্রবাসী আয় কিছুটা কমেছে। এই মাসে ১৬৮ কোটি ৩৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে প্রবাসীরা। দেশীয় মুদ্রায় প্রতি ডলার ১০৭ টাকা ধরে যার পরিমাণ ১৮ হাজার ১৩ কোটি টাকা।
বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। বিশেষ করে হুন্ডি প্রতিরোধে কড়াকড়ি ও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়াতে নেয়া নানা উদ্যেগের সুফল পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই মাসে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠায় ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, আগষ্টে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার, অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৫১ লাখ ডলার এবং ডিসেম্বরে ১২৩ কোটি ডলার। এরপরে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারি মাসে আসে ১৫৬ কোটি ডলার, মার্চে ২০২ কোটি ২৪ লাখ ডলার এবং এপ্রিলে ১৬৮ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠায় প্রবাসীরা।
এর আগে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার।
রেমিট্যান্স বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। সর্বশেষ সেবার বিনিময়ে দেশে রেমিট্যান্স আয় আনতে ফরম সি পূরণ করার শর্ত শিথিল করেছে। পাশাপাশি সেবা খাতের উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের ঘোষণা ছাড়াই ২০ হাজার মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। একই সাথে হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ পথে রেমিট্যান্স না পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তবে দুইটি বড় ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে ঈদুল ফিতর শেষ হয়েছে। সামনে রয়েছে ঈদুল আজহা। এ কারণে আগামীতে রেমিট্যান্স বেশি পরিমাণ আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।