মে ১৯, ২০২৪

ইসরাইলের ওপর গত কয়েক দশকে সবচেয়ে বড় অভিযান চালাল ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাস। ৪৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের অবরুদ্ধ গাজায় ২০০৬ সাল থেকেই হামাসের সরকার। ২০০৫ সালে দ্বিতীয় ইন্তিফাদায় (প্রতিরোধ আন্দোলন) গাজা থেকে সরে যায় ইসরাইল। পরের বছর ২০০৬ সালে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠায় জয়ী হয় হামাস এবং সরকার গঠন করে। তবে নির্বাচনে বেশি আসন পেয়েও ক্ষমতা পায়নি হামাস। ফিলিস্তিনের প্রধান রাজনৈতিক দল ফাতাহ এবং পশ্চিমা সমর্থকরা হামাসকে পশ্চিম তীর থেকে সরিয়ে দেয়। ফলে ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে কোন্দল দেখা দেয়। অবশেষে ২০০৭ সালে গাজার ক্ষমতা চলে যায় হামাসের হাতে। এর পর থেকে গাজায় আর নির্বাচন হয়নি। এএফপি, আরব নিউজ, দ্য নিউ আরব।

হামাস সরকারের মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং নিরাপত্তা প্রধানমন্ত্রী ইসাম আল-দালিসের নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হয়। ১৬ বছরের গাজা শাসনে হামাসের নেতৃত্বে বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে। সংস্থাগুলো রাজনৈতিক, সামরিক এবং সামাজিক বিভিন্ন কার্য সম্পাদন করে। সাধারণ নীতিনির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয় একটি সংস্থা। একে পলিটব্যুরো বলা হয়। ১৫ জন সদস্য দ্বারা এ সংস্থাটি গঠিত। ইসমাইল হানিয়াহ (৬০) বর্তমানে রাজনৈতিক প্রধান হিসাবে সংস্থাটিতে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২০ সাল থেকে কাতারের দোহা থেকে তিনি গাজায় তার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। কারণ মিসর গাজায় এবং বাইরে তার চলাচল নিষিদ্ধ করে। শূরা কমিটি নামে একটি সংস্থা পলিটব্যুরোর সদস্যদের নির্বাচন করে। তবে এ কমিটির সদস্য সংখ্যা অজানা। স্থানীয় কমিটিগুলো গাজা এবং পশ্চিম তীরে তৃণমূলের সমস্যাগুলো দেখাশোনা করে।

গাজার দৈনন্দিন বিষয়গুলো ইয়াহিয়া সিনওয়ার তত্ত্বাবধান করা হয়। তিনি আগে হামাসের সামরিক শাখার প্রধান ছিলেন। পাশাপাশি রয়েছে সমাজকল্যাণ এবং স্বাধীনভাবে পরিচালনার সংগঠন মারওয়ান ইসা এবং মোহাম্মদ দেইফ হামাসের সামরিক শাখা ইজ আদ-দিন আল-কাসেম ব্রিগেডের নেতৃত্ব দেন। এদের মধ্যে মোহাম্মদ দেইফ এমন একজন নেতা যাকে কমপক্ষে ছয়বার হত্যার চেষ্টা করেছে।

এবারের ইসরাইলের অভিযানেও দেইফ প্রধান ভূমিকায় ছিলেন। তিনিই অডিও বার্তায় ইসরাইলে হামাসের অভিযানের ঘোষণা করেছিলেন। রেকর্ডিংয়ে দেইফকে বলতে শোনা যায়, ‘আক্রমণের প্রথম ২০ মিনিটে ৫,০০০ রকেট এবং শেল দ্বারা শত্রুদের অবস্থান এবং দুর্গগুলো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।’ছোট্ট এ সংগঠনটি গত সপ্তাহের শক্তিশালী ইসরাইলের ওপর অভিযানে ব্যবহার করেছে নানা ধরনের অস্ত্র এবং গোলাবারুদ। ফলে হামাসের আর্থিক সহায়কদের নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তায় হামাস তাদের কার্যক্রম পরিচালিত করে থাকে। কীভাবে হামাসকে অর্থায়ন করা হয় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেই প্রথমে আসে ইরানের নাম। তাদের অর্থায়নের প্রায় ৭০ শতাংশ আসে ইরান থেকে। শুধুমাত্র আর্থিক সহায়তাই নয় বাহিনীটিকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমেও সাহায্য করে ইরান। পাশাপাশি ফিলিস্তিনি প্রবাসী এবং বিশ্বের নানা প্রান্তের দাতারা হামাস আন্দোলনের অর্থায়ন করে। কিছু ইসলামিক দাতব্য সংস্থার মাধ্যমেও অর্থ পেয়ে থাকে হামাস। ইরান ছাড়াও রিসেপ তায়েপ এরদোগান ক্ষমতায় আসার পর তুরস্ক থেকেও আর্থিক সাহায্য পায় হামাস। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিএসআইএস)-এর ট্রান্সন্যাশনাল থ্রেটস প্রজেক্টের সিনিয়র ফেলো ড্যানিয়েল বাইম্যান বলেন, ‘হামাস ইরান থেকে (গাজা) উপত্যকায় টানেলের মাধ্যমে অস্ত্র পায়। এমইআই-এর একজন সিনিয়র ফেলো বলেছেন চার্লস লিস্টার, ‘সমুদ্রপথে হামাসকে তার আরও উন্নত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাচ্ছে ইরান।’

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *