ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

মসলার জগতে হলুদের রয়েছে নানা গুণাবলি। স্বাদের সঙ্গে সঙ্গে রঙের ক্ষেত্রেও হলুদ সমানভাবে পারদর্শী। অন্যদিকে গুণাবলির দিক থেকেও আছে লম্বা তালিকা। হলুদ মূলত আদা গোত্রীয় পরিবারের সদস্য, সঙ্গে গাছের শিকড় থেকে প্রাপ্ত এক ধরনের মসলা।

হলুদের আদি উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ এশিয়া। প্রচুর পরিমাণ পানি সঙ্গে ২০-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলুদ উৎপাদনের জন্য আদর্শ আবহাওয়া। হাজার হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত এ হলুদ রান্না ছাড়াও নানা ধরনের ঔষধি কাজের ক্ষেত্রেও সমানভাবে চর্চিত। ধারণা করা হয়, হলুদ নামটি আরবি শব্দ থেকে এসেছে।

ভেষজ গুণে ভরা এ মসলাটি রান্না এবং ওষুধের পাশাপাশি রূপচর্চার ক্ষেত্রেও বেশ সুপরিচিত। এ ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদের নানা ব্যবহার রয়েছে ত্বকের যত্নে। অন্যদিকে ঔষধি হিসাবেও যেমন হজমে যাদের সমস্যা আছে তারা অনায়াসে হলুদ খেতে পারেন। মূলত পরিপাক তন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর মধ্য দিয়ে আপনার হজম ক্রিয়া সচল রাখতে সহায়তা করে হলুদ। এ ছাড়া ওজন কমাতেও হলুদ বেশ উপকারী। স্থূলতা বাড়াতে থাকা টিস্যুর গ্রোথ কমিয়ে আনতে সহায়তা করে এ মসলাটি।

এ ছাড়া ত্বকের বলিরেখা, কালো দাগসহ ত্বকের রুক্ষতা কমাতে হলুদ বেশ কার্যকর। অন্যদিকে কোথাও কেটে গেলে নিয়মিত হলুদ খেলে তা দ্রুত রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে। এ ছাড়া শরীরের নানা ধরনের ব্যথা কমাতেও হলুদ বেশ কার্যকর। জাফরানমিশ্রিত দুধে হলুদের এক চিমটি মিশ্রণ আপনার ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। এ ছাড়া মানসিক অবসাদ দূর করতে, সর্দি কাশি কিংবা জ্বরের ক্ষেত্রে হলুদে রয়েছে প্রাকৃতিক নানা উপাদান। এ ছাড়া মেয়েদের অনিয়মিত ঋতুস্রাবের ক্ষেত্রেও হলুদ বেশ কার্যকর। কাঁচা হলুদ কিংবা হালকা গরম দুধের সঙ্গে অল্প হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে নিলেই খুব সহজেই ঋতুস্রাবের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

হলুদের পুষ্টিগুণঃ ( উপকারিতা )

হলুদ হলো Zingiberaceae পরিবারভুক্ত একটি উদ্ভিদ।
এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো Curcuma longa।

১০০gm হলুদ গুঁড়োর ফাইটো- কেমিক্যাল (মিথান্যলিক এক্সট্র্যাক্ট) টেস্টে দেখা গেছে যে,এতে ষ্টার্চ ৬৭.৩৮% , প্রোটিন ৩.৪২% , ফ্ল্যাভোনয়েডস ২৭০৯.৩৯mg / ১০০gm , ট্যানিন্স ২৯১.৬৪ mg/১০০gm., ফ্যানোল ১৫৮৪.০৪mg/ ১০০gm , ভিটামিন-C ০.৬mg/১০০gm এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ৭০.৯০mg/L-GAEAC। এছাড়াও রয়েছে ট্রাইটারপিনস,স্যাপোনিনস এবং অ্যালকাল্যয়েডস।কিন্তু কোন স্টোরয়েড পাওয়া যায়নি, যা একটি চমকপ্রদ ফলাফল।

প্রোটিনঃ
ইহা এক প্রকার মাইক্রোনিউট্রিয়্যান্ট যা মানব দেহের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রোটিন তৈরি হয় 1000 বা তারও বেশি ছোট ছোট অ্যামিনো অ্যসিডের অনুর সংমিশ্রণে। একটি প্রোটিন তৈরি করতে ২০ টি ভিন্ন রকমের অ্যামিনো অ্যাসিডের প্রয়োজন হয়। প্রোটিনের গুরুত্ব মানব শরীরে এতটাই প্রকট যে,একটি নতুন কোষ তৈরিতে, কোষগুলোকে বিভিন্ন ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে এবং কোষগুলোর কার্যকারিতা বাড়াতেও এর সাহায্যের প্রয়োজন হয়।এছাড়াও প্রোটিন সাহায্য করে আমাদের শরীরে বিভিন্ন প্রকার অ্যান্জাইম,
হরমোন এবং ইমিউন সেল/কোষ এবং রোগ প্রতিরোধ সম্পন্ন কোষ উৎপন্ন করতে।

ফ্ল্যাভোন্যয়েডসঃ
ইহা এমন এক ম্যলিকিউলস যা দেহকে প্রতিদিনের বিষক্রিয়া হতে দূরে রাখতে সহায়তা করে। ফ্ল্যাভানোলস,ফ্ল্যাভোনস,ফ্ল্যাভানোনস,ফ্ল্যাভান 3-OLS,
আইসোফ্ল্যাভোনস,অ্যান্থোসায়িনিডিনস এগুলোকে একত্রে ফ্ল্যাভোন্যয়েডস বলে।
ফ্ল্যাভোন্যয়েডস যুক্ত খাবার ক্যান্সার, নিউরোডিজেনারেটিভ ( মস্তিষ্ক /স্নায়ুতন্ত্রের রোগ, যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের কোষ গুলো কাজ করা বন্ধ করে দেয় বা মারা যায়।) কার্ডিওভ্যাসকুলার ( হৃদপিণ্ড ও রক্তবাহী শিরা) এ রোগগুলো প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং দীর্ঘস্হায়ী স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাস করে।
কাঁচা বা শুকনো হলুদ ছাড়াও লাল,কমলা,হলুদ রংয়ের ও মিশ্র রঙে রঞ্জিত শাকসবজি ও ফলমূলে প্রচুর ফ্ল্যাভোন্যয়েডস রয়েছে।

ট্যানিনসঃ
ইহা দেহকোষের অক্সিডেটিভ ট্রেস,ফ্রী রেডিক্যালের ক্ষতি,হৃদরোগ,টাইপ ২ ডায়াবেটিস, বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ প্রদাহ/ক্ষত,জীবনু এবং ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও অ্যান্টিকার্সিওজেনিক তথা ক্যান্সারের মত কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগ গুলো হতে রক্ষা করে এবং কোষের বৃদ্ধি ও বিস্তাররোধে সাহায্য করে।

ফ্যানলঃ
ইহা এমন একটি ম্যলিকিউল যা বহুবিধ কাজে এর ব্যবহার হয়। বিশেষভাবে চর্মরোগ, ব্যথা নাশক,কণ্ঠস্বর বসে যাওয়া,টনসিল ফুলে যাওয়া ইত্যাদিতে এর কার্যকারিতা রয়েছে।

ভিটামিন-C (অ্যাসকরবিক অ্যাসিড)
মানব দেহ ভিটামিন সি তৈরি করতে পারেনা, বাহির থেকে খাদ্যের মাধ্যমে অথবা সাপ্লিম্যান্টের মাধ্যমে এটি গ্রহণ করতে হয়। ইহা একটি শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধক, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রক, ক্ষতস্থান নিরাময়কারী,
লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনকারী এবং ইত্যাদিতে এর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টঃ
এটি শরীরের ক্ষতিকারক অতি সূক্ষ্ম পরমাণুর সঙ্গে লড়াই করে DNA কোষকে সুরক্ষিত রাখে।ফলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরো দৃঢতর হয় এবং ক্যান্সারের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...