মে ২০, ২০২৪

রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মূলত ইউক্রেনের যুদ্ধ সামনের দিনগুলোতে কীভাবে পরিচালিত হওয়া উচিৎ তা নিয়ে পুতিন রুশ সামরিক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন।

শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন গত শুক্রবারের বেশিরভাগ সময়ই ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ সদর দপ্তরে রাশিয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হওয়া উচিত তা নিয়ে আলোচনা করেন। আর এদিনই ইউক্রেনে সর্বশেষ মিসাইল বৃষ্টি চালায় রাশিয়া।

মূলত দিন দু’য়েক আগে ইউক্রেনের কিছু সামরিক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, রাশিয়া সম্ভবত আগামী বছরের শুরুতে ইউক্রেনে আবারও স্থল আক্রমণের পরিকল্পনা করছে। তাদের সেই আশঙ্কার মধ্যেই শীর্ষ সামরিক কর্তাদের সঙ্গে পুতিনের বৈঠকের খবর সামনে এলো।

টেলিভিশনে প্রচারিত ছবিতে দেখা গেছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশন সদর দপ্তর পরিদর্শনে গিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ এবং অন্যান্য কর্তকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট বলেছেন, আমরা অবিলম্বে এবং মধ্য-মেয়াদে যুদ্ধের কী কৌশল নেব, সে বিষয়ে আমি আপনাদের প্রস্তাব জানতে চাই। ক্রেমলিন নেতাকে রাষ্ট্রীয় টিভিতে সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা প্রতিটি অপারেশনাল দিকনির্দেশনাতে কমান্ডারদের কথা শুনব এবং আমি আমাদের তাৎক্ষণিক এবং মধ্যমেয়াদী পদক্ষেপের বিষয়ে আপনার প্রস্তাবগুলো শুনতে চাই।’

বিবিসি মনিটরিং বলছে, শুক্রবার সারাদিন ধরে চলা এই বৈঠকে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর স্টাফ প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর সর্বময় অধিনায়ক জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন।

এদিকে শুক্রবারের বৈঠকে প্রেসিডেন্ট পুতিনের পাশে জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমভের উপস্থিতির অর্থ, তাকে তার পদ থেকে বরখাস্ত হয়েছিল বলে অনলাইনে যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে তা ভুল। ইউক্রেন যুদ্ধে অতিরিক্ত সতর্কতার দায়ে ৬৭ বছর বয়সী এই জেনারেলকে অনেক সময়ই তীব্র সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট চলতি মাসের গোড়ার দিকে বলেছিলেন, রুশ হামলার সমালোচনা করে ইউক্রেনে তাদের ‘লড়াইয়ের মিশনকে’ ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। ক্রেমলিনে সামরিক এক সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সেসময় তিনি বলেন: ‘হ্যাঁ, আমরা (অবকাঠামোর ওপর) হামলা চালাচ্ছি। কিন্তু কে এসব শুরু করেছে?’

পুতিন বলেন, ৮ অক্টোবর রাশিয়ার সীমানাভুক্ত ক্রিমিয়ার সাথে রুশ সংযোগ সেতুতে বিস্ফোরণ ঘটানোর জবাবে তারা এই হামলা চালাচ্ছেন। তিনি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ তোলেন, কুরস্ক পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুতের লাইন ইউক্রেন বোমা দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে এবং পূর্ব ইউক্রেনের দোনেতস্কে পানির সরবরাহ লাইন তারা কেটে দিয়েছে।

সংবাদমাধ্যম বলছে, রাশিয়া সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে। মূলত, ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সাথে রাশিয়াকে সংযুক্তকারী ইউরোপের বৃহত্তম রেল ও সড়ক সেতুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে গত ৮ অক্টোবর থেকে ইউক্রেনের জ্বালানি নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামোগুলোতে আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া।

এর মধ্যে গত মাসে অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের বৃহত্তম বন্দরনগরী সেভাস্তোপলের কাছে কৃষ্ণ সাগরে রুশ নৌবহরে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর বেশ কয়েক দফায় ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনা লক্ষ্য করে রাশিয়া কার্যত ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টি চালায়।

মূলত গত অক্টোবর থেকে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে বেশ কয়েক দফায় রুশ আক্রমণের কারণে সারা ইউক্রেনে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে। বিবিসি বলছে, ইউক্রেনের পাওয়ার গ্রিডে রাশিয়ার হামলা লাখ লাখ মানুষকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *