এপ্রিল ২৭, ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ-ভুটানের মধ্যে তিনটি নতুন সমঝোতা স্মারক সই এবং পুরানো একটি চুক্তি নবায়ন করা হয়েছে ৷ আজ সোমবার (২৫ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে এ দুই নেতার মধ্যে বৈঠক শেষে ৩টি সমঝোতা স্মারক সই ও একটি চুক্তি নবায়ন করা হয়।

পরে দুই দেশের পক্ষে বইতে স্বাক্ষর করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সেগুলো হলো: সমঝোতা-১ ভুটানের রাজধানীতে থিম্পুতে একটি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত, সমঝোতা-২ কুড়িগ্রামে ভুটানের বিনিয়োগে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং সমঝোতা-৩ ভোক্তা সুরক্ষায় প্রযুক্তিগত সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তি সই করা হয়। এছাড়াও নবায়ন হয়েছে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তি।

চারদিনের বাংলাদেশ সফরের প্রথমদিনই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক বসেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক। দুপুর ১টার কিছু পরে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছান ভুটানের রাজা৷ এ সময়, টাইগারগেটে রাষ্ট্রীয় অতিথিকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷

পরে, দুই শীর্ষ নেতা একান্ত বৈঠকে বসেন৷ এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভুটানের রানি জেতসুন পেমা৷ পরে, সেখানেই অনুষ্ঠিত হয় প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক৷ সবশেষ, দুই নেতার উপস্থিতিতে বাংলাদেশ-ভুটানের মধ্যে তিনটি সমঝোতা সই এবং একটি চুক্তি নবায়ন করা হয়।

রাজধানীর ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক।

এর আগে সকাল ১০টার দিকে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে বহন করা ফ্লাইটটি অবতরণ করে। এরপর তাকে শুভেচ্ছা জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। পরে তিনি রাজধানীর ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান।

বিমানবন্দরে ভুটানের রাজাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় এখন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক।

মহান মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল বন্ধুরাষ্ট্র ভুটান। সময়ে-অসময়ে বন্ধুত্বের হাত বাড়ানো দেশটির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব আবারও এলেন বাংলাদেশে। প্রায় এক যুগ পর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দিতে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন ভুটানের রাজা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক চার দিনের বাংলাদেশ সফর এসেছেন মূলত স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে। এর পাশাপাশি উচ্চপর্যায়ের বেশ কয়েকটি বৈঠকেও অংশ নেবেন তিনি।

এই সফরে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করবেন ভুটানের রাজা। স্বাক্ষর হতে পারে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগসহ অন্তত তিনটি সমঝোতা স্মারক।

সবশেষ ২০১৩ সালে ঢাকা সফর করা ওয়াংচুক এবারও এলেন রানি জেতসুন পেমাকে সঙ্গে নিয়ে। এছাড়া সবশেষ জাতীয় নির্বাচনের পর এটিই কোনো দেশের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সফর, যেখানে ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি, বাণিজ্য, পর্যটন, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন বিষয় গুরুত্ব পেতে পারে। এ ছাড়া তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং একটি সমঝোতা নবায়ন হতে পারে বৈঠকে। সফরের দ্বিতীয় দিন ২৬ মার্চ ভোরে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন রাজা নামগিয়েল ওয়াংচুক। সেখান থেকে ফিরে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করবেন তিনি। এছাড়া বিকেলে যোগ দেবেন বঙ্গভবনের আনুষ্ঠানিকতায়।

২৭ মার্চ সকালে ভুটানের রাজা পদ্মা সেতু পরিদর্শনে যাবেন। সেখান থেকে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপান-বাংলাদেশের যৌথ ব্যবস্থাপনার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করবেন তিনি। ঢাকায় ফিরে বিকেলে বসবেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে ।তবে রানি জেতসুন পেমা পুরো সফরে থাকছেন না রাজার সঙ্গে। ২৭ মার্চ রাজাকে রেখেই বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরবেন তিনি।

সফরের চতুর্থ দিন ২৮ মার্চ বিমানে সৈয়দপুর যাবেন রাজা। সেখান থেকে সড়কপথে কুড়িগ্রামের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করবেন তিনি। আঞ্চলিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশের টার্গেট এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি ভুটানি বিনিয়োগের জন্য ছেড়ে দেয়া। এটি সম্ভব হলে ভুটানের সীমান্ত শহর ফুন্টসলিংয়ের সঙ্গে স্থলপথে যোগাযোগ স্থাপিত হবে। খুলে যাবে ত্রিদেশীয় বাণিজ্যের নতুন দুয়ার।

ওই দিন বিকেলেই বাংলাদেশের সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের আসাম হয়ে ভুটান ফিরে যাবেন রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *