মে ৯, ২০২৪

সড়কে বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি (জেল-জরিমানা) কমিয়ে ‘সড়ক পরিবহণ (সংশোধন) আইন, ২০২৪’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। খসড়া সংশোধিত আইনে বিভিন্ন ধারায় শাস্তি কমানো হয়েছে।

বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ তথ্য জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১২টি ধারায় বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি কমানো হয়েছে। বেশিরভাগই আর্থিক জরিমানার পরিমাণ কমানো হয়েছে। আগে তিনটি ধারায় অপরাধ অজামিনযোগ্য রাখা হলেও সেখানে এখন একটি ধারা অজামিনযোগ্য রাখা হয়েছে।

মাহবুব হোসেন বলেন, কারিগরি নির্দেশ না মানলে এতদিন তিন বছর জেল দেওয়ার বিধান ছিল। এই অপরাধের সাজা আগের মতো রাখা হলেও এটিকে অজামিনযোগ্য থেকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রহীনভাবে বা ওভারলোডে গাড়ি চালানোর পর দুর্ঘটনা হলে সেটিকে অজামিনযোগ্য থেকে জামিনযোগ্য অপরাধ করা হয়েছে। এখন শুধুমাত্র দুর্ঘটনায় মারা গেলে বা গুরুতর আহত হলে তা অজামিনযোগ্য অপরাধ হবে।

২০১৮ সালে সড়ক পরিবহণ আইন করা হয় জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রীর নেতৃত্বে সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল এই আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে আইন সংশোধন করা হচ্ছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রস্তুত সংক্রান্ত অপরাধ করলে এতদিন ২ বছর জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান ছিল, সেটিকে কমিয়ে ২ বছর জেল ও ৩ লাখ টাকা করা হচ্ছে। লাইসেন্স বাতিলের পরেও যানবাহন চালালে বর্তমান আইনে ৩ মাস কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এখন তা কমিয়ে ৩ মাস জেল ও ১৫ হাজার হাজার টাকা করা হচ্ছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, লাইসেন্স ছাড়া কন্ডাক্টরের দায়িত্ব পালন করলে এক মাস কারাদণ্ড, পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার সাজা বহাল রাখা হয়েছে। এই ধারায় এখন কন্ডাক্টরের সঙ্গে সুপারভাইজার শব্দটি যোগ করা হয়েছে। ভাড়ার চার্ট না দেখালে বা বেশি ভাড়া নিলে এতদিন ১ মাস জেল বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হতো। দুটি অপরাধ একসঙ্গে করলে এতদিন এই শাস্তি দেওয়া হতো। এখন চার্ট প্রদর্শন না করলে বা বেশি ভাড়া দাবি করলে এই সাজা দেওয়া হবে।

তিনি জানান, মিটার টেম্পারিং করলে এতদিন ৬ মাসের জেল, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হতো। এখন এই অপরাধের জন্য তিন মাসের কারাদণ্ড, ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। একই সঙ্গে এক পয়েন্ট কাটা যাবে। সরকার নির্ধারিত হারের থেকে টার্মিনাল চার্জ বেশি নিলে তা চাঁদাবাজি হিসেবে আমলে নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান মাহবুব হোসেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বর্তমান আইন অনুযায়ী ট্রাফিক সাইন ও সংকেত না মানলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হতো। এখন জরিমানার পরিমাণ কমিয়ে ২ হাজার টাকা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ওজন বহন করলে ৩ বছর জেল ও ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হতো। এখন সেটিকে বদলে ১ বছর জেল, ১ লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে। এর সঙ্গে চালকের এক পয়েন্ট কাটা যাবে। পরিবেশদূষণকারী মোটরযান চালালে ৩ মাস জেল ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হতো। এটিকে কমিয়ে এক মাস জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যত্রতন্ত্র যাত্রী ওঠানামা করালে বর্তমান আইনে পাঁচ হাজার জরিমানার সঙ্গে চালকের ১ পয়েন্ট কাটা হতো। এটি পরিবর্তন করে এখন এক হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে।

মোটরযান মালিককে বিমা না করলে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বলেও নতুন বিধান এই আইনে যুক্ত করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *