নভেম্বর ১৫, ২০২৪

এখন গরম অতটা তীব্র না হলেও আবহাওয়া কিছুটা উত্তপ্ত। এদিকে রোজার সময়টাও প্রায় তেরো ঘণ্টা। সুতরাং শরীর যাতে ঠান্ডা ও সুস্থ থাকে সেজন্য খাবারের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ গরমে গুরুপাক খাবারে শরীর হয় উত্তপ্ত এবং দেহে আসে ক্লান্তি। এ কারণে ইফতার ও সেহরিতে পানি ও জলীয় খাবারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যাতে দেহে পানিস্বল্পতা ও প্রস্রাবে সংক্রমণ না হয়।

* ইফতারে কী খাবেন

ইফতারে ডুবো তেলে ভাজা খাবারের পরিবর্তে রাখা যেতে পারে-দই-চিড়া, নরম খিচুড়ি, পায়েস, শরবত, লাচ্ছি, ঘোল, রায়তা, কাঁচা ছোলা, শসা, টমেটোর সালাদ, ফলের সালাদ, ফালুদা, ভেজানো চিড়া-নারিকেল, দুধ-সেমাই, দুধ-সাগু, ওটস, দুধ-কনফ্লেক্স, পাতলা সুজি, দুধ-মুড়ি ইত্যাদি। সালাদ কিংবা রায়তা টকদই দিয়ে তৈরি করলে ভালো হয়। টকদই প্রোবায়োটিকের কাজ করে। এটা শরীরের বিষক্রিয়া বের করে দেয় ও অন্ত্রের জীবাণু ধ্বংস করে। দই-চিড়া যেমন শরীর ঠান্ডা করবে, তেমনি সালাদও দেহে ঠান্ডা আমেজ এনে দেবে। দই-চিড়া থেকে শর্করা ও আমিষ পাওয়া যাবে, আবার এটি হজমেরও সহায়ক।

* সালাদ কীভাবে তৈরি করবেন

বিভিন্নভাবে সালাদ করা যায়। যেমন-শুধু শসা-টমেটো-গাজরের সালাদ ছাড়াও টমেটো-পেঁয়াজ-ধনিয়াপাতা-রসুন-ক্যাপসিকাম-সিরকা-লবণ সব এক সঙ্গে মিশিয়ে কড়াইতে হালকা আঁচে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে নামিয়ে ঠান্ডা করে ফ্রিজে রাখতে হবে। তারপর ইফতারের সময় বের করে পরিবেশন করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফল দিয়েও সালাদ করা যায়। শসা কুচি-পেঁয়াজ-কাঁচামরিচ-পুদিনাপাতা-টকদই দিয়ে রায়তা করলেও গরম থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

* পিপাসা দূর হবে যেভাবে

রোজার সময় আমরা ক্ষুধায় যতটা না কাতর হই, তার চেয়ে বেশি হই পিপাসায়। কারণ দিনের কর্মব্যস্ততায় শরীরে ঘাম হয় প্রচুর, ফলে দেহে পানির পরিমাণ কমতে থাকে। এ কারণে বোধকরি সব দেশে সব কালে ইফতারের প্রথম খাবার হিসাবে শরবতের প্রচলন হয়েছে। পানিশূন্যতা রোধ ও বিপাকক্রিয়ার জন্য শরবত অপরিহার্য। পুষ্টিমানের দিক থেকেও শরবতের গুরুত্ব অনেক। এটা আমাদের দেহে পানি জোগায়। ইফতারে খুব বেশি ঠান্ডা পানি ও ঠান্ডা শরবত খাওয়া উচিত নয়। এতে শরীরের তাপমাত্রার তারতম্যের জন্য গলায় ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। পরিবারের রুচি অনুযায়ী বিভিন্নভাবে শরবত তৈরি করা যায়। যেমন-তেঁতুল-আখের গুড়ের শরবত। ইসবগুল ও লেবুর শরবত, স্কোয়াশ, তোকমা, সিয়াসিড, দুধ বা দইয়ের শরবত। লাচ্ছি, ঘোল, ডাবের পানি, যে কোনো ফলের রস দিয়ে শরবত, মিল্কশেক ইত্যাদি। যেভাবেই খান না কেন, সবই দেহে পানির জোগান দেবে। তবে এ সময় চা-কফি যতটা সম্ভব কম খাওয়া উচিত। কারণ এতে পানিস্বল্পতা বেড়ে যায়। সবচেয়ে ভালো হয় শসা, পুদিনাপাতা ও লেবুর রস দিয়ে শরবত তৈরি করা। এতে দেহে একটা শীতল ও স্নিগ্ধ আমেজ আসে।

* ফল ও সবজি কী খাবেন

ফল খেলে দেখেশুনে টাটকা ফল কেনা উচিত। এখন পাওয়া যাচ্ছে আনারস, বরই, কমলা, তরমুজ, বাঙ্গি, স্ট্রবেরি, নাশপাতিসহ অন্য বিদেশি ফল। রসালো ফলই এ সময় উপযুক্ত। আপেল-আঙুরের চেয়ে নাশপাতিতে পানি থাকে প্রচুর। ফল রোগ প্রতিরোধে কার্যকর। এছাড়া আনারসে আছে ব্রোমেলেইন এনজাইম। যা অ্যান্টিইনফ্লামেটরি হিসাবে কাজ করে। এতে আর্থ্রাইটিসের ব্যথা উপশম হয়। ফলের সালাদে পাওয়া যাবে বিভিন্ন ধরনের খনিজ লবণ, ভিটামিন এ ও সি। শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য ইফতারে পুদিনাপাতা-টমেটো ও আদা দিয়ে মাখানো কাঁচা ছোলা রাখতে পারেন। কাঁচা ছোলা রক্তের কোলেস্টেরল কমাবে। হালিমও একটি জলীয় পুষ্টিকর খাবার। তবে অনেক ঝাল দিয়ে হালিম তৈরি করা উচিত নয়। এতে আরও গরম অনুভূত হবে। মরিচের বৈশিষ্ট্যই হলো শরীরকে গরম করা। এ সময় সবজি কম খাওয়া হয় বলে কোষ্টকাঠিন্য দেখা দেয়।

* সেহরিতে কী খাবেন

সেহরিতে সবজি রাখা উচিত। তেল-মসলা কম দিয়ে পাতলা ঝোলের তরকারি হলে ভালো হয়। কারণ তৈলাক্ত ও খুব মসলাযুক্ত খাবারে যেমন গরম অনুভূত হয় তেমনি ডিহাইড্রেশনের আশঙ্কা থাকে। সেহরিতে টমেটোর টক, দুধ, ডাল থাকলে ভালো হয়। এ সময় পরাটা-বিরিয়ানি না খাওয়াই ভালো। এতে শরীর আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠবে ও পানির পিপাসা বেড়ে যাবে। গরমে চাই সহজপাচ্য ও ঠান্ডা খাবার। খাবারে মসলা বেশি না থাকাই ভালো। তবে আদা ও গোলমরিচ থাকলে কোনো ক্ষতি নেই। বরং এগুলো হজমে সাহায্য করে। পানির চাহিদার কথা চিন্তা করে ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত কিছুক্ষণ পরপর পানি পান করতে হবে। অবশ্য যতক্ষণ জেগে থাকা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত। এমনকি তারাবি নামাজ আদায় করার সময় হাতের কাছে পানির গ্লাস রাখতে হবে। শরীরে পানির পরিমাণ ঠিক থাকলে সম্পূর্ণ রোজা রাখা কষ্টকর হবে না। পানি খাবার হজমে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ বজায় রাখে এবং শরীর থেকে রাসায়নিক ও টক্সিন বের করে দেয়।

সুতরাং এ সময় খাবার হবে জলীয়, হালকা মসলাযুক্ত, সহজপাচ্য ও সুষম।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...