মে ২০, ২০২৪

ভারত থেকে বিদেশে মানবপাচারের অভিযোগে ১৬ বাংলাদেশি, ১ মিয়ানমারের নাগরিকসহ মোট ৩৬ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জ গঠন করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। ভারতের দুইটি পৃথক আদালতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার এনআইএ’র পক্ষে এ তথ্য জানানো হয়।

এনআইএ সূত্রে জানা যায়, আসামের গুয়াহাটির এনআইএ আদালতে ২৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪ জন বাংলাদেশি, ১ জন মিয়ানমারের ও বাকিরা ভারতীয় নাগরিক। অন্য দিকে ভারতের বেঙ্গালুরুর বিশেষ এনআইএ আদালতে ১২ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে।

অভিযুক্ত বাংলাদেশি নাগরিকরা হলেন- ফেরদৌস ব্যাপারী, মোহাম্মদ অলি উল্লাহ, অমল দাস, মাসুদ সরদার, সোহাগ গাজী, সুমন শাইক, মো. বেল্লাল, মো. মিরাজুল ইসলাম, জাকির খান, মো. বাদল হাওলাদার, মো. কবির তালুকদার, ঘরামী মোহাম্মদ বশির হোসেন ও সৌদি জাকির।

এনআইএ এক বিবৃতিতে জানায়, চার্জশিটভুক্ত ১২ এবং দুজন পলাতক অভিযুক্ত মোহাম্মদ শাহজালাল হালদার ও ইদ্রিসের গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ৬১টি আধার কার্ডসহ ভুয়া ভারতীয় পরিচয়পত্র উদ্ধার করে তদন্তকারী কর্মকর্তারা। অভিযুক্তরা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ এবং অবৈধ উপায়ে ভারতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে।

এনআইএর অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামসহ বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ভারতের রাজ্যগুলো দিয়ে মানবপাচারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল অভিযুক্তরা। একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলো এ বিষয়ে তদন্ত করলেও গত অক্টোবরে এই তদন্তের দায়িত্বভার নেয় এনআইএ। গত বছরের নভেম্বর মাসে এক সঙ্গে ভারতের একাধিক রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে বড় ধরনের অভিযান চালায় এনআইএ।

পর্যটন ব্যবসায় আড়ালে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার থেকে ভারত হয়ে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও কানাডায় মানবপাচার করে করে থাকে অভিযুক্তরা। একই সঙ্গে অবৈধ হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গেও তারা জড়িত। এসব অভিযোগে কলকাতাসহ ভারতের ১০ রাজ্যের ৪৮টির বেশি জায়গায় এক সঙ্গে চলে অভিযান চালানো হয়।

রাজ্যগুলো হলো- পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, হরিয়ানা, পুদুচেরি, রাজস্থান, জম্মু-কাশ্মীর। জম্মু-কাশ্মীরের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বস্তি এলাকায় অভিযান চালিয়ে শত শত নকল ভারতীয় ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, পাসপোর্টসহ একাধিক নথি উদ্ধার করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত বছরের অক্টোবরে ভারতের তামিলনাড়ুতে অভিযান চালিয়ে এক মানবপাচারকারীকে গ্রেপ্তার করে এনআইএ। এছাড়া অভিযানে ৩৩ বিদেশি নাগরিকসহ শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করে তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তাদের মধ্যে ভারতীয়দের পাশাপাশি বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের নাগরিকও ছিল। পরে বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে ভারতীয় পাসপোর্ট আইন এবং ১৪ ফরেনার্স আইনে মামলা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা জানায়, এই চক্র সীমান্ত দিয়ে নিয়মিতভাবে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের নাগরিকদের ভারতে পাচার করে আসছে। ভারতে প্রবেশের পর ভুয়া ভারতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে তাদেরকে স্থায়ীভাবে ভারতে বসবাসের সুযোগ করে দেওয়া হতো। শুধু তাই নয়, কাজ ও উন্নত জীবন-যাপনের লোভ দেখিয়ে ভারতে এনে নারীদের কম মজুরিতে কাজ করাতে বাধ্য করা হতো। এছাড়া বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা নারীদের ভারতে এনে অপেক্ষাকৃত বেশি বয়সের পুরুষের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হতো। যারা প্রতিবাদ করত তাদের ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ বলে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়ার ‘হুমকি’ দিত পাচা

রকারীরা।

 

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *