বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারকে সামাল দিতে পুনরায় ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারের দামের সর্বনিম্নসীমা) আরোপ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে এই ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বসে থাকা পুঁজিবাজারের জন্য কোনো সমাধান নয়। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা নিশ্চিত করে পুঁজিবাজারকে নিজ গতিতে চলতে দেওয়ার জন্য ধীরে ধীরে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া উচিৎ বলে মনে করেন রশিদ ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী।
তবে তিনি মনে করেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার আগে বিনিয়োগকারীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই বিষয়টিকে প্রধান্য দিয়ে আইন সংশোধন করতে হবে। বিনিয়োগকারীরা সুরক্ষা না পেলে এই পুঁজিবাজার টিকবে না।
সম্প্রতি পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
আহমেদ রশিদ লালী বলেন, আজকে ফ্লোর প্রাইস তুলে দিতে ভয় পাওয়ার মূল কারণ হলো ফোর্স সেল। ফ্লোর প্রাইস তুলে দিলেই মার্জিন পোর্টফোলিওগুলোতে ফোর্স সেল হবার সম্ভাবনা দেখা দিবে। আর এই মার্জিন রুলস ২৫ বছর আগের। তাই এ আইনটি পরিবর্তন জরুরি। বিশ্বের পুঁজিবাজারে অর্থনীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিত্য নতুন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। অথচ আমাদের এখানে গদবাধা নিয়মে পুঁজিবাজার চলছে। আমাদের পুঁজিবাজার শুধুমাত্র বিএসইসি কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। এটি হওয়ার কথা ছিল না। ডিএসই ব্যর্থ একটি স্টক এক্সচেঞ্জে রূপান্তর হয়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সর্বদা এই স্টক এক্সচেঞ্জকে ভাবতে হবে। এর জন্য ডিএসইতে একটি রিসার্চ টিম থাকতে হবে।
ডিএসইর সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি বলেন, শুধু মাত্র ফ্লোর প্রাইস দিয়ে দীর্ঘদিন বসে থাকা সমাধান নয়। বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তায় ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা জরুরি ছিল, সেহেতু এখান থেকে বের হয়ে আসতে সম্মিলিত উদ্যোগটাও জরুরি। আমাদের পুঁজিবাজারের প্রাণ বিনিয়োগকারীরা। তাদের পুঁজির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। এটাই আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ।
ডিবিএ’র সাবেক সভাপতি বলেন, অর্থনীতিতে সংকট আসবেই। আর এ সংকটকে মোকাবেলা করেই সকলকে এগিয়ে যেতে হবে। পুঁজিবাজারের স্বার্থে ডিএসইকে যুগোপযোগী করতে হবে। একইসঙ্গে সময়ের সাথে মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাদের এই সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়নে সহায়তা করবে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসইসি। অথচ পবিত্র রমজান মাসের লেনদেনের সময়সূচির বিষয়টিও বিএসইসিকে নির্ধারণ করে দিতে হয়। ২০২০ সালের বৈশ্বিক মহামারিতে অনলাইন ট্রেডিং সুবিধা না থাকায় দীর্ঘদিন পুঁজিবাজার বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এমন একটি ব্যর্থ স্টক এক্সচেঞ্জ দিয়ে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তবে নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর পুঁজিবাজার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু ডিএসই তাদেরকে ঠিক মতো সহায়তা করতে পারছেন না।
পুঁজিবাজারের এ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোকে আরো সক্রিয় করতে আইন সংশোধন করা জরুরি। নতুন কোম্পনি লিস্টিং করলেই হবে না, তার আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য বিএসইসিকে আরো কঠোর হতে হবে। তবেই তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ফান্ডামেন্টাল ভ্যালুর ওপর সঠিক নিয়মে পুঁজিবাজারের উত্থান-পতন ঘটবে ।