এপ্রিল ২৮, ২০২৪

চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি ‘বিপজ্জনকভাবে মন্দার কাছাকাছি’ আসবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে বিশ্বব্যাংক। মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি – যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং চীনের – দুর্বল প্রবৃদ্ধির জেরে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

বুধবার (১১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সারা বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোকে অর্থ ধার দিয়ে থাকে বিশ্বব্যাংক। মঙ্গলবার প্রকাশিত এক বার্ষিক প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, ২০২৩ সালের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস প্রায় অর্ধেক কমিয়েছে তারা।

মূলত সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার বাড়ানোর প্রবণতা, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন অব্যাহত ও বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর নড়বড়ে অবস্থানের কারণে দেশগুলো অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি হয়েছে। আর এর জেরেই বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।

ব্যাংকটি জানিয়েছে, তারা ২০২৩ সালে বৈশ্বিক মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৭ শতাংশ হবে বলে প্রত্যাশা করছে। ২০০৯ সাল ও ২০২০ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময়টা বাদ দিলে গত তিন দশকের মধ্যে এটিই হবে সবচেয়ে ধীর প্রবৃদ্ধির হার।

এর আগে ২০২২ সালের জুনে প্রকাশিত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের প্রবৃদ্ধির হার ৩ শতাংশ হতে পারে বলে জানিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক।

বিশ্ব ব্যাংক বলছে, প্রবৃদ্ধির হার কমায় উদীয়মান অর্থনীতি ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। এসব দেশ ঋণের বোঝা মোকাবিলা করতে সমস্যায় পড়বে। এছাড়া দুর্বল মুদ্রা, আয়ের প্রবৃদ্ধিতে স্থবিরতা ও বাণিজ্যখাতে বিনিয়োগের পরিমাণ কমতে থাকায় পরবর্তী ২ বছরে এই দেশগুলোতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হয়েছে, যা গত ২ দশকের তুলনায় অর্ধেক।

বিশ্ব ব্যাংক উল্লেখ করেছে, ২০২২ সালের শেষের দিকে এসে জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের কারণে কিছু পরিমাণে মূল্যস্ফীতির চাপ কমে এসেছে, তবে সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, সরবরাহ খাতে নতুন করে বিঘ্ন দেখা দেওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি এবং সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির ধারা অটুট থাকতে পারে।

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো প্রতিক্রিয়া হিসেবে পলিসি রেট বর্তমান প্রত্যাশিত হারের চেয়ে বেশি হারে বাড়াতে পারে। এসব উদ্যোগের পরিণাম হিসেবে বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।

নিম্ন আয়ের দেশগুলোর খাদ্য ও জ্বালানি সংকট, সংঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী এবং ঋণ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে বিশ্ব ব্যাংক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে।

এছাড়া ভর্তুকি মূল্যে অর্থায়ন ও অনুদান দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে বেসরকারি মূলধন ও অভ্যন্তরীণ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া, মানবসম্পদ তৈরি ও স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়তার গুরুত্বের কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক।

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র এই বছর মন্দা এড়াতে পারে উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংক ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, মার্কিন অর্থনীতি ০.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। তবে উচ্চ মূল্য এবং আরও ব্যয়বহুল ঋণের হারের বৈশ্বিক দুর্বলতা সম্ভবত মার্কিন ব্যবসা এবং ভোক্তাদের জন্য আরেকটি বিপরীতমুখী পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।

এছাড়া যদি কোভিড-১৯ সংক্রমণ যদি বাড়তে থাকে বা ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ আরও খারাপ হয় তবে সরবরাহ ব্যবস্থাপনা আরও বিঘ্নিত হওয়া নিয়ে ঝুঁকিতে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে দুর্বল চীনা অর্থনীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ইউরোপও।

কারণ ইউরোপ দীর্ঘকাল ধরে চীনে প্রধান রপ্তানিকারকের ভূমিকায় রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন নতুন বড় খরচ যোগ করেছে। এতে করে দরিদ্রতম অনেক দেশে দারিদ্র্য হ্রাস ইতোমধ্যেই স্থবির হয়ে গেছে এবং একইসঙ্গে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিদ্যুৎ, সার, খাদ্য এবং মূলধনের সুবিধা সীমিত থাকতে পারে।’

বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব বিশেষ করে সাহারান আফ্রিকার মতো অঞ্চলের দরিদ্র দেশগুলোতে পড়বে, যেখানে বিশ্বের ৬০ শতাংশ দরিদ্রের বাসস্থান। এছাড়া ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে মাথাপিছু আয় মাত্র ১.২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে বিশ্বব্যাংক। এর ফলে দারিদ্র্যের হার বাড়তে পারে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *