নভেম্বর ২৮, ২০২৪

বিবিএসের প্রতিবেদনে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে তালাকের সংখ্যা বেড়েছে। বিগত বছরের যে কোনো সময়ের চেয়ে এর হার বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। শুধু শহরে নয়, গ্রামেও বেড়েছে তালাকের হার। আর বিবাহবিচ্ছেদের সবচেয়ে বড় কারণ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক এবং দাম্পত্যজীবন পালনে অক্ষমতা (বনিবনার অভাব)।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২২ (এসভিআরএস) এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। যা সম্প্রতি ওয়াবসাইটে প্রকাশ করে সংস্থাটি। জরিপ প্রতিবেদনটি গত ৩১ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয়। জরিপটিতে নমুনা হিসেবে নেওয়া হয়েছে তিন লাখের বেশি খানা (পরিবার)।

প্রতিবেদনে উঠে এসছে, প্রতি হাজারে বিবাহের হার এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ দেখা গেছে। পল্লি অঞ্চলে বিবাহের হার শহরাঞ্চলের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেশি। পল্লি অঞ্চলে হাজারে বিয়ের হার ১৯ দশমিক ৫ জন এবং শহরে ১৩ দশমিক ৮ জন। বৈবাহিক অবস্থার বিচারে জনসংখ্যার ৬৩ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ বর্তমানে বিবাহিত এবং ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ কখনো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হননি। অবশিষ্ট ৭ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ বিধবা বিপত্নীক ও তালাকপ্রাপ্ত। নারীদের মধ্যে বিধবা তালাকপ্রাপ্তার ভাগ তাদের পুরুষ সমকক্ষ অর্থাৎ বিপত্নীক/তালাকপ্রাপ্তদের তুলনায় প্রায় ৭ গুণ বেশি, যথাক্রমে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ ও ১ দশমিক ৯ শতাংশ।

বিবাহের বয়স সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, সম্প্রতি বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রথম বিবাহের গড় বয়স কিছুটা নিম্নমুখী। পুরুষদের বিবাহের বয়স ২০১৮ সালে ছিল ২৪ দশমিক ৪ বছর যা ২০২২ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ বছরে। পক্ষান্তরে, নারীদের বিবাহের গড় বয়স ২০১৮ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৬ বছর, যা ২০২২ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৪ বছরে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিশোরীদের জন্য অপ্রাপ্ত বয়স্ক/বাল্যবিবাহ একটি উদ্বেগের বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে। কেননা ১৫ বছরের পূর্বে এবং ১৮ বছরের পূর্বে বিবাহের হারে ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ১৫ বছরের পূর্বে বিবাহ ২০২২ সালে বেড়ে হয়েছে ৬.৫ শতাংশ; যা ২০১৮ সালে ছিল ৪.৬ শতাংশ। ১৮ বছরের আগে নারীদের বিবাহের হার ২০২২ সালে ৪০ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে; যা ২০১৮ সালে ৩০ শতাংশ ছিল। অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে ২ দশমিক ১৮ শতাংশ পয়েন্ট করে বেড়েছে।

২০২২ সালে বিগত বছরের তুলনায় তালাকের হার দ্বিগুণ হয়েছে। বছরে প্রতি হাজার জনসংখ্যায় তালাক হচ্ছে ১ দশমিক ৪ জনের যা ২০২১ সালে প্রতি হাজার জনসংখ্যায় ছিল শূন্য দশমিক ৭ জন। পল্লি ও শহর উভয় এলাকায় এ বৃদ্ধির হার একই আদলে হয়েছে। দাম্পত্য বিচ্ছিন্নের হারও ২০২২ সালে বেড়েছে। প্রতি হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে শূন্য দশমিক ২৯ জনের দাম্পত্য বিচ্ছেত হচ্ছে যা ২০২১ সালে শূন্য দশমিক ১৩ জন।

তালাকের যেসব কারণ:

বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে বড় কারণ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক। জরিপে উত্তরদাতাদের প্রায় ২৩ শতাংশ এই কারণ সামনে এনেছেন। এরপর রয়েছে দাম্পত্যজীবন পালনে অক্ষমতা—২২ শতাংশ।

ভরণপোষণের ব্যয় বহন করতে অসামর্থ্য অথবা অস্বীকৃতি, পারিবারিক চাপ, শারীরিক নির্যাতন, যৌন অক্ষমতা বা অনীহা ইত্যাদিও রয়েছে বিবাহবিচ্ছেদের কারণের তালিকায়।

বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কারণে সবচেয়ে বেশি বিচ্ছেদ হয়েছে ঢাকা বিভাগে, কম ময়মনসিংহ বিভাগে। দাম্পত্যজীবন পালনে অক্ষমতায় বিবাহবিচ্ছেদ বেশি বরিশালে, কম সিলেটে। ভরণপোষণ দিতে অসমর্থতার কারণে বিবাহবিচ্ছেদ বেশি রাজশাহীতে, কম চট্টগ্রামে।

পারিবারিক চাপে বিবাহবিচ্ছেদ বেশি ময়মনসিংহে, কম ঢাকায়। নির্যাতনের কারণেও বিবাহবিচ্ছেদ বেশি হয়েছে ময়মনসিংহে, কম রাজশাহীতে। যৌন অক্ষমতা অথবা অনীহার কারণে রংপুরে বিবাহবিচ্ছেদ বেশি হয়েছে। বরিশালে এ ক্ষেত্রে হার শূন্য। দীর্ঘদিন বিদেশে থাকায় তালাকের ঘটনা বেশি ঘটছে সিলেটে। বিবিএসের প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...