মে ১৯, ২০২৪

দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নানা অনিয়মে জর্জরিত। এতে আমানত রাখতে ভরসা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। আমানতের চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করে ফেলছে এসব প্রতিষ্ঠানগুলো। এর ফলে একধরনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এসব প্রতিষ্ঠানে আমানত বেড়েছে মাত্র দশমিক ০৮ শতাংশ। যেখানে এর আগের প্রান্তিকেও আমানত বেড়েছিলো ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ আস্থার সংকটে আশানুরুপ আমানত তুলতে পারছে না এসব প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমানত দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৭২০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। একই সময়ে ঋণ বিতরণ দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৩৩৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ এসব প্রতিষ্ঠানের আমানতের চেয়ে ঋণ ১৮ হাজার ৬১৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বেশি।

জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত তার আগের প্রান্তিকের তুলনায় বেড়েছে ৩৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। আর একই সময়ে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৮৯৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা। জুন প্রান্তিকে আমানত বেড়েছিলো ৯৮৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। তখন এ খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছিলো ১ হাজার ১৯৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

আইআইডিএফসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম সরওয়ার ভূঁইয়া অর্থসূচককে বলেন, গ্রাহকদের আমানতের পাশাপাশি ব্যাংক ঋণও আছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর। এগুলো থেকে মূলত ঋণ বিতরণ করা হয়। করোনার সময় এ খাতে কিছুটা সংকট দেখা দেয়। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতে দেরি করেছিলো। এর ফলে কিছুটা আস্থার সংকট দেখা দেয়। এই মূহুর্তে আমরাও আমানত বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়দী আমানত সংগ্রহে মনযোগী হয়েছি। এজন্য বেশ কিছু স্কিম চলমান রয়েছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের সিংহভাগ এসেছে বেসরকারি খাত থেকে। মোট আমানতের ৯২ দশমিক ২১ শতাংশ এসেছে এই খাত থেকে। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বেসরকারি খাতের আমানত কমেছে ৭৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা বা দশমিক ১৯ শতাংশ। তবে এসময় পাবলিক সেক্টরের আমানত বেড়েছে ১১৬ কোটি ১ লাখ টাকা বা ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

এদিকে আলোচ্য এই প্রান্তিকে সবেচেয়ে বেশি আমানত কমেছে রাজশাহী বিভাগে। এ বিভাগে সেপ্টেম্বর শেষে আমানত দাঁড়িয়েছে ৪৬১ কোটি ৬ লাখ টাকা। আগের প্রান্তিকে যার পরিমাণ ছিলো ৪৭৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ এই তিন মাসে আমানত কমেছে ১২ কোটি ৮৯ লাখ বা ২ দশমিক ৭২ শতাংশ। আর সবেচেয়ে বেশি আমানত বেড়েছে বরিশাল বিভাগে। এ বিভাগে আমানত বেড়েছে ১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারল্যচাপের মধ্যে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তীব্র প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। এছাড়া নানা অনিয়মে জড়িয়েছে পড়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। এর ফলে ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ায় আমানত পেতে সমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি ঋণগ্রহীতাদের ব্যবসা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন পরিস্থিতি হয়েছে।

বর্তমানে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমানতের হিসাব দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৪২ হাজার ২৭৯টি। এর আগের প্রান্তিকে যা ছিলো ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৬১টি। অর্থাৎ সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আমানতের সঙ্গে সঙ্গে হিসাবের পরিমাণও কমেছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *