প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করায় ভারতের কেন্দ্রে আসীন বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ফের আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন ভারতীয় কৃষকরা। সেই কর্মসূচীর অংশ হিসেবে রাজধানী নয়াদিল্লি অভিমুখে পদযাত্রার ডাক দিয়েছেন তারা।
পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্যে সক্রিয় কৃষক সংগঠনগুলোর দুই জোট কিষান মজদুর মোর্চা এবং সংযুক্ত কিষান মোর্চা এই পদযাত্রা কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। কিষান মজদুর মোর্চায় অন্তর্ভুক্ত সক্রিয় কৃষক সংগঠনের সংখ্যা ২৫০টি এবং সংযুক্ত কিষান মোর্চাভুক্ত সংগঠনে র সংখ্যা ১৫০টি।
প্রসঙ্গত, প্রস্তাবিত নতুন কৃষক আইন বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে আন্দোলন শুরু করেছিলেন ভারতের কৃষকরা। প্রায় এক বছর ধরে দিল্লিতে কৃষকদের অবস্থান, প্রতিবাদ কর্মসূচী এবং ৭ শতাধিক কৃষক মৃত্যুবরণের পর ২০২১ সালের নভেম্বরে নতুন আইন বাতিল করে কেন্দ্রীয় সরকার। বিভিন্ন দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও প্রদান করে।
কিষান মজদুর মোর্চা ও সংযুক্ত কিষান মোর্চার নেতারা জানিয়েছেন, ২০২০ সালের আন্দোলনের সময় নতুন কৃষি আইন বাতিলসহ ৩টি দাবি জানিয়েছিলেন কৃষকরা— (ক) ফসলের ন্যূনতম মূল্য বৃদ্ধি, (খ) কৃষি ঋণের শর্ত সহজ করা ও সুদ মওকুফ এবং (গ) স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন।
কৃষকনেতাদের অভিযোগ, ২ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার।
এ ইস্যুতে সোমবার কেন্দ্রীয় সরকারের খাদ্য ও ভোক্তা অধিকার বিষয়ক মন্ত্রী পীযুষ গয়াল এবং কৃষিমন্ত্রী অর্জুন মুণ্ডার সঙ্গে মধ্যরাত পর্যন্ত বৈঠক করেছেন কিষান মজদুর মোর্চা ও সংযুক্ত কিষান মোর্চার নেতারা। কিন্তু সেই বৈঠক থেকে কোনো মিমাংসা আসেনি।
কিষান মজদুর মোর্চার অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা সারওয়ান সিং পান্ধের ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও মধ্যপ্রদেশের কৃষকরা পদযাত্রা ও ট্রাক্টরযাত্রা শুরু করেছেন।
এনডিটিভিকে সারওয়ান সিং পান্ধের বলেন, ‘দুই বছর আগে সরকার লিখিতভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে আমাদের সব দাবি দাওয়া তারা মেনে নেবে….আমরা ইস্যুটি শান্তিপূর্ণভাবে মিমাংসা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সরকারের এক্ষেত্রে আন্তরিকতার গুরুতর অভাব দেখা যাচ্ছে। তারা কেবল সময় ক্ষেপণ করতে চাইছে।’
এদিকে সোমবার কৃষকদের কর্মসূচি ঘোষণার পরপরই নয়াদিল্লিতে সেই পদযাত্রার প্রবেশ বন্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে দিল্লি পুলিশ। দিল্লির তিন সীমান্তপথ সিংঘু, তিকরি এবং গাজিপুরের সড়কগুলোতে ব্যারিকেডসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এই সীমান্তপথগুলো পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও মধ্যপ্রদেশের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে দিল্লিকে। সীমান্ত এলাকায় ট্রাক্টরযাত্রা ও মিছিল বন্ধও ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া তিন প্রদেশের কৃষকরা যেন একত্র হতে না পারেন, সেজন্য হরিয়ানা এবং মধ্যপ্রদেশের রাজ্যসরকার প্রদেশের সীমান্ত এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে এনডিটিভি।
সূত্র : এনডিটিভি