দৈহিক সৌন্দর্যের জন্য ত্বক গুরুত্বপূর্ণ। সৌন্দর্যচর্চার জন্য ত্বকের যত্নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে বা বাড়াতে হাজারও যত্ন-আত্তি আমাদের! তবে জিনগত, পরিবেশগত বা হরমোনের কারণে কিংবা সঠিক যত্নের অভাবে অনেকসময় অল্প বয়সেই ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। বয়স বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই ত্বকে ভাঁজ পড়তে শুরু করে। ঝুলে পড়ে টান টান পেলব ত্বক। কখনো কুঁচকে যায়। দাগ পড়ে।
ত্বক চিকিৎসা ও ত্বকচর্চার জন্য প্রাচীনকাল থেকে মানুষ নানা রকম পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। এর সবচেয়ে আধুনিক সংযোজন হল লেজার চিকিৎসা। সাধারণত ত্বক বা রূপচর্চা কিংবা ত্বকের নানাবিধ সমস্যা সমাধানে যখন বাজারের প্রসাধনসামগ্রী, ঘরোয়া চিকিৎসা বা প্রথাগত চিকিৎসাব্যবস্থায় কাজ না হয় তখন লেজার চিকিৎসা হতে পারে ভালো একটি সমধান। এটি সম্পূর্ণ ব্যথাহীনভাবে কোনোরূপ কাটাছেঁড়া ছাড়া করা হয়।
* লেজার চিকিৎসা যেভাবে করা হয়
এটি এক ধরনের ক্লিনিক্যাল ট্রিটমেন্ট। এর মাধ্যমে মূলত নতুন ত্বক প্রতিস্থাপন করা হয়। এ চিকিৎসায় প্রথমে লেজারের মাধ্যমে লেজার রশ্মি সরাসরি ত্বকের ওপরে ফেলা হয়। পরে ত্বকের ভেতর বিভিন্ন ধরনের ক্রোমোফোর, যেমন-পানি, অক্সি-হিমোগ্লোবিন, মেলানিন লেজার রশ্মি গ্রহণ করে এবং তাপ সৃষ্টির মাধ্যমে লেজারের ধরন অনুযায়ী ত্বকের টিস্যু ধ্বংস করে চিকিৎসা সম্পন্ন করা হয়। এরপর ধীরে ধীরে ত্বকের কোলাজেনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে স্কিনটোন ও টেক্সচার ভালো হয়।
* কারা লেজার ট্রিটমেন্ট করাতে পারেন
সাধারণত যাদের ত্বকে নিম্নোক্ত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য লেজার ট্রিটমেন্ট ভালো একটি সমাধান।
▶ মুখে বা চোখের আশপাশ দিয়ে দাগ বা বলিরেখা।
▶ ব্রণ বা গুটি বসন্তের ফলে সৃষ্ট অগভীর দাগ বা ক্ষত।
▶ ত্বকে ছোপ ছোপ অসম দাগ, মেছতা
▶ জন্মদাগ, ট্যাটু।
▶ বয়সের কারণে সৃষ্ট ত্বকের ভাঁজ, দাগ বা ঝুলে পড়া।
▶ রোদে ঝলসানো ত্বক।
▶ কসমিক সার্জারির পর ত্বকে সমস্যা।
▶ নাকের ওপরে বা দুই পাশে তেলগ্রন্থি বেড়ে যাওয়া বা বড় বড় গোটা দেখা যাওয়া।
▶ মেয়েদের মুখে অবাঞ্চিত লোম।
* ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা নির্মূলে লেজার
▶ অবাঞ্চিত লোম ও চুল : এক্ষেত্রে লেজার ফ্লুক্স ১০০০ ডায়োড মেশিন, ইনটেন্স পালস লাইট লেজার মেশিন বা লং পালসড এনডি ইয়াগ লেজার ব্যবস্থায় চিকিৎসা করা হয়। এগুলোর মাধ্যমে অবাঞ্চিত লোম বা চুল ত্বকের গভীর থেকে অঙ্কুরে নির্মূল করা হয়। সবগুলো পদ্ধতিই ব্যথাহীন ও রক্তপাতমুক্ত।
▶ ব্রণ : ব্রণ নির্মূলে পালসড ডাই লেজার অথবা ব্লু লাইট ব্যবহার করা হয়। এ রশ্মি ব্রণের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে ফেলে। এ চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক বেশি খাওয়ার প্রয়োজন হয় না।
▶ দাগ : কিউ সুইচড এনডি ইয়াগ লেজার মেশিন এবং আধুনিক পিকো লেজারের মাধ্যমে এটি করা হয়। ত্বকে জন্মদাগসহ যে কোনো দাগ এবং মুখের ত্বকের উপরিভাগের লোম দূরীকরণে এ চিকিৎসা দারুণ কার্যকর।
▶ টিউমার : ত্বকের টিউমার, আঁচিল, ক্যানসার, বয়সের বলিরেখা প্রভৃতি দূরীকরণে লেজার ফলপ্রসূ চিকিৎসাপদ্ধতি। এক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় কার্বন ডাই-অক্সাইডযুক্ত লেজার। এতে অ্যানেসথেশিয়ারও প্রয়োজন হয় না।
* যেসব বিষয় লক্ষ্য রাখবেন
লেজার চিকিৎসার দুটি পদ্ধতি রয়েছে- অ্যাবলেটিভ এবং নন-অ্যাবলেটিভ। তাই প্রথমেই আপনাকে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তিনি আপনার ত্বকের ধরন দেখে চিকিৎসাপদ্ধতি নির্বাচন করবেন। কোনো হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এমন মানসম্পন্ন চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের সংবেদনশীল চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি। লেজার চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নিলে আরও কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন-
▶ লেজারের আগের কিছুদিন অতিরিক্ত সূর্যালোক এড়িয়ে চলুন। ত্বকে যেন ট্যান না পড়ে বা ত্বক পুড়ে না যায় সেদিকে লক্ষ রাখুন। বাইরে বের হলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
▶ লেজারের অন্তত চার সপ্তাহ আগে থেকে লেজার রিসারফেসিং, ডিপ ক্লিনজিং, ফেস মাস্কের মতো ত্বকচর্চা এড়িয়ে চলুন।
▶ লেজারের অন্তত ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আলোক সংবেদনশীলতা তৈরি করে এমন ওষুধ (যেমন-ব্রণের জন্য ডক্সিসাইক্লিন) সেবন করবেন না।
▶ দাদ বা জ্বরঠোসার মতো হার্পিসজাতীয় কোনো রোগের পূর্ব ইতিহাস থাকলে চিকিৎসককে অবহিত করবেন।
▶ লেজার চিকিৎসার সময় চোখে লেজার রশ্মির প্রতিরোধক চশমা পরিধান করতে হবে।