দেশজুড়ে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে বিপাকে পড়েছেন পোল্ট্রি খামারিরা। ঈদের পর থেকে শুরু হওয়া এই তাপপ্রবাহে হিটস্ট্রোকের কারণে প্রতিদিন তাদের মুরগি মারা যাচ্ছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন দেশের প্রান্তিক খামারিরা।
এই পরিস্থিতিতে, ডিম ও মুরগি উৎপাদন ৪ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে ব্রয়লার মুরগি ও ডিম সরবরাহে সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পোট্রি এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার।
এই অবস্থা মোকাবেলায় এবং প্রান্তিক খামারিদের রক্ষায় সরকারের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের খামারগুলো বিজ্ঞানসম্মত না হওয়ায় প্রচন্ড তাপদাহ সহ্য করতে না পেরে মুরগিগুলো হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারের সগযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘ঈদের পর থেকে শুরু হওয়া চলমান তাপপ্রবাহের ফলে হিটস্ট্রোকের কারণে সারা দেশে প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ মুরগি মারা যাচ্ছে যার আনুমানিক মূল্য ২০ কোটি টাকা। ঈদের পর গত ১০ থেকে ১২ দিনে সারাদেশে ১০ লাখের বেশি ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালী মুরগি মারা গেছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ ছিল ব্রয়লার মুরগি এবং ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ছিল লেয়ার মুরগি। এছাড়া সোনালীসহ অন্যান্য মুরগির ৫ শতাংশ মারা গেছে।’
এ অবস্থা আরও কয়েকদিন চলতে থাকলে খামারগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে, ডিম ও মুরগির উৎপাদন কমে যাবে। এতে সারাদেশের খামারিদের ক্ষতির পরিমাণ ২০০ কোটি টাকায় দাঁড়াবে বলে সুমন হাওলাদার দাবি করেন।
এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কর্পোরেট ডিম মুরগি সরবরাহকারী ও তেজগাঁও ডিম সিন্ডিকেট ডিম ও মুরগির সংকট তৈরি করতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘জুন থেকে তারা দাম বাড়াতে শুরু করবে। আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডিম ও মুরগির দাম মারাত্মকভাবে বাড়তে পারে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারের উচিত পোল্ট্রি খামারিদের রক্ষা করা। যেমন সরকারের পক্ষ থেকে খামারিদের মুরগির বাচ্চা ও পোল্ট্রি ফিডে ভর্তুকি দিয়ে উৎপাদনে ধরে রাখতে হবে এবং সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে হবে যাতে বাজারে সংকট সৃষ্টি না হয়।’
প্রান্তিক খামারিদের কর্পোরেট কোম্পানির জিম্মি দশা থেকে মুক্ত করে ডিম মুরগির উৎপাদন ঠিক রাখতে মুরগির বাচ্চা ও পোল্ট্রি ফিড বিদেশ থেকে আমদানির অনুমতি দিলে প্রান্তিক খামারিরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে উল্লেখ করে সুমন হাওলাদার বলেন, বিপিএ’র সারাদেশের খামারিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মুরগির মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি নরসিংদীতে। এ অঞ্চলে গত ১২ দিনে প্রায় ৩ লাখ, ময়মনসিংহ গাজিপুর অঞ্চলে ২ লাখ, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১ লাখ ৭৫ হাজার, সিলেট অঞ্চলে ৫০ হাজার, যশোরে ১ লাখ ৫০ হাজার, পাবনায় ৫০ হাজার, চুয়াডাঙ্গায় ১ লাখ, মুরগি মারা গেছে।’
পোল্ট্রি খামারিদের তাপপ্রবাহ মোকাবেলায় তিনি বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন। এগুলো হলো- শেডে সঠিক বায়ু চলাচল নিশ্চিত করা, ধারণ ক্ষমতার মধ্যে কম মুরগি রাখা, পানিতে ভিটামিন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার না করা, লেবু এবং আখের গুড় দিয়ে দুপুরে শরবতের ব্যবস্থা করা, মুরগির শরীরে পানি স্প্রে করা, শেডের ছাদে ভেজা পাটের ব্যাগ রাখা এবং নিয়মিত পানি ঢালা, দুপুরের মুরগিকে খাবার খাওয়ানো যাবে না।