মে ১৫, ২০২৪

আগের বছরের তুলনায় অর্ধেকে নামাতে পারলেও আবার বিপুল লোকসান গুনল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক (এনবিএল)। খেলাপি ঋণের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়া ব্যাংকটি গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে লোকসান ছিল সোয়া তিন হাজার কোটি টাকা।

বড় ঋণ খেলাপি হয়ে পড়া, ঋণের বিপরীতে সুদ আদায় করতে না পারা ও নগদ টাকার সংকট মেটাতে ধার করা সুদের অর্থ পরিশোধ গিয়ে দুই বছরে পৌনে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান করল সবচেয়ে বেশি পরিশোধিত মূলধনের ব্যাংকটি। খবর বিডিনিউজের। গত শনিবার ব্যাংকটির পরিচালক পর্ষদের বৈঠকে ২০২৩ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। এরপর গতকাল রোববার ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের বোর্ডে এই তথ্য প্রকাশ হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৩ সালে ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে চার টাকা ৬৫ পয়সা। ৩ হাজার ২১৯ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের ব্যাংকটির শেয়ার সংখ্যা ৩২১ কোটি ৯৭ লাখ ৩৯ হাজার ৫৭০টি। এই হিসাবে লোকসান দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৯৭ কোটি ১৭ লাখ ৮৯ হাজার টাকা।

আগের বছরে ব্যাংকটির সমন্বিতভাবে শেয়ার প্রতি নিট লোকসান হয় ১০ টাকা ১৩ পয়সা। টাকার অঙ্কে লোকসান ছিল ৩ হাজার ২৬১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অর্থাৎ দুই বছরে ব্যাংকটি লোকসান করেছে ৪ হাজার ৭৫৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকারও বেশি।

এই লোকসানের কারণে বিনিয়োগকারীদেরকে লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। আগের দুই বছরও তারা কোনো লভ্যাংশ পায়নি। গতকাল এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরও ৩.৫৭ শতাংশ বেড়েছে। তবে অভিহিত মূল্য ১০ টাকার চেয়ে ৪৩ শতাংশ কমে এখন শেয়ারদর ৫ টাকা ৭০ পয়সা।

বিপুল পরিমাণ লোকসানের কারণ কী–এই প্রশ্নে ন্যাশনাল ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক ও চেয়ারম্যান সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেন, পুরনো দায়ের কারণে ব্যাংক এখন লোকসান গুনছে। যারা ব্যাংকের টাকা নিয়েছে তারা অর্থগুলো ফেরত দিলে সমস্যাটি কেটে যায়। টাকা ফেরত দেওয়া তাদের দায়িত্ব। তিনি জানান, অনেক শিল্পগ্রুপই ঋণের অর্থ ফেরত না দেওয়ায় আয়ের তুলনায় সুদ ব্যয় বেড়ে গেছে। এতে নগদ টাকার সংকট চলছে। টাকা ধার করতে গিয়ে বেশি সুদ দিতে হচ্ছে অন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে। সৈয়দ ফারহাত বলেন, আমরা সব প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছি অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য। যারা যোগাযোগ করেছেন তাদের সঙ্গে আলোচনা করছি। আমরা তাদের বলেছি, ব্যাংকের পাশে থাকলে আমরাও তাদের দিকটি দেখব।

২০২৩ সালের ৯ মাসে ব্যাংকটি সুদ বাবদ আয় করে এক হাজার ২৭৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এই সময়ে আমানতকারী ও ধরা করা অর্থের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করে দুই হাজার ২০৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। শুধু ৯ মাসেই সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে ব্যাংকটি লোকসান গুনে ৯৩১ কোটি ৪৭ লাখ টাকার। ২০২২ সালের প্রথম ৯ মাসে ব্যাংকটি লোকসান হয়েছিল ৩৮৬ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিতরণ করা ৪২ হাজার ২৬০ কোটি টাকার মধ্যে খেলাপি ১৩ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। খেলাপির হার ৩১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ব্যাংকটিতে আমানতের পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *