ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪

পৃথিবীর স্বঘোষিত মোড়ল আমেরিকা বাংলাদেশের গণতন্ত্রিকভাবে নির্বাচিত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার কে ফেলে দিয়ে আমেরিকার পছন্দ মতো পুতুল সরকার কে বসানোর চক্রান্ত করছে। মুখে তারা বলছে যে বাংলাদেশে নাকি গণতন্ত্র বিপন্ন, আসল কারণ হল শেখ হাসিনার মতো শক্তিশালী প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থাকায় বাংলাদেশে আমেরিকার শোষণ যন্ত্র কাজ করছে না । আর তাই গণতন্ত্র বিপন্ন এই দোহাই দিয়ে এর আগে আমেরিকা বাংলাদেশের ওপর ভিসা অবরোধ চালু করেছিল । কিন্তু যখন দেখা গেল সেই ভিসা বাতিল এর চাপে বাংলাদেশ এর বর্তমান সরকার কে কিছু করা গেল না , তাই আমেরিকা এখন নতুন ফন্দি আঁটছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ও ভূ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন আমেরিকা বর্তমান বাংলাদেশে কোটি কোটি টাকা পাঠাচ্ছে । আমেরিকার বর্তমান ইচ্ছে – এই সরকার কে সরিয়ে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুশীলনামধারী মানুষদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা । এবং যতদিন না বাংলাদেশে আমেরিকার মনমতো গণতন্ত্র না ফিরছে, ততদিন ঐ সরকার কে বাংলাদেশের ক্ষমতায় রাখা ।

মানেটা বুঝতে পারছেন ? আমেরিকার খেলাটা কি বোধগম্য হচ্ছে ? যদি না হয় আর একটু খোলসা করে বলি চলুন –

প্রথমে বলি বাংলাদেশের বর্তমান হাসিনা সরকারের ওপর আমেরিকার রাগের কারণ কি ? কারণ শেখ হাসিনা সরকার আমেরিকার তাবেদারি করে না । শেখ হাসিনা বাংলাদেশ কে আমেরিকার আর্থিক শোষণের ক্ষেত্র হতে দেয়নি। শেখ হাসিনার দোষ শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করেছে, শেখ হাসিনার দোষ তিনি তার সময়কালে বাংলাদেশকে অনুন্নত দেশের তালিকা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছেন।

আর এজন্যই শেখ হাসিনা সরকার ভালো না । শেখ হাসিনাকে ফেলে দিয়ে, বাংলাদেশে আমেরিকার তাবেদার সরকার বসাতে চাই আমেরিকা ।

দোষ এখানেই শেষ নয় – শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ তার ইতিহাসে প্রথমবার আন্তর্জাতিক ভূ রাজনীতিতে কোন দেশের তাবেদারি না করে একই সাথে – আমেরিকা, রাশিয়া , চীন ও ভারতের মতো মহাশক্তি দের সাথে স্বাধীন ও সার্বভৌম বিদেশনীতি বজায় রাখছে । আর এজন্যই আমেরিকা শেখ হাসিনা কে ফেলে দিয়ে তার তাবেদার সরকার কে বাংলাদেশে বসাতে চায়। যারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমেরিকার তাবেদারি করবে ।

আর এই উদ্দেশ্যেই আমেরিকা বাংলাদেশে নিজেদের পছন্দের সরকার তৈরি করার জন্য 4 Step Policy বা চার ধাপ পলিসি নিয়েছে –

প্রথম ধাপে : আমেরিকা বাংলাদেশের একাংশ সংবাদ মাধ্যম কে কিনে নিয়ে সরকার বিরোধী জনমত গঠন করেছে। এবং বিদেশে থাকা বাংলাদেশী YouTube বা সোশ্যাল মিডিয়ার বক্তাদের টাকা দিয়ে উদেশ্যমূলক অনবরত হাসিনা সরকার এর বিরুদ্ধে জনমত গঠন করেছে । এবং টাকা ঢেলে হাসিনা সরকার এর উন্নয়ন প্রকল্প গুলোকে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সামনে না আসতে বাধা দিয়েছে ‌। গত বেশ কয়েক বছর ধরে আগামী নির্বাচনকে উদেশ্য করে আমেরিকা সফল ভাবে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে আসছে ।

দ্বিতীয় ধাপে -আন্তরজাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওপর চাপ তৈরি করেছে । কখনো ভিসা বাতিল, কখনো আর্থিক স্যাংশন( নিষেধাজ্ঞা ) আরোপ করে, কখনো আইএমএফ ( IMF) এর লোন বাতিল করে বাংলাদেশ কে আন্তর্জাতিক মঞ্চে চাপে ফেলেছে , আর্থিক ভাবে চাপে ফেলেছে।

তৃতীয় ধাপে : বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে বিপুল অর্থ সাহায্য করেছে , দেশের রাস্তায় রাস্তায় জঙ্গি আন্দোলন তৈরি করতে । যারা মনে করেন আন্দোলন এমনি এমনি হয় , তারা একটু ভাবুন সত্যিই কি আন্দোলন টাকা ছাড়া হয় ? এই যে এত এত মানুষের আন্দোলন,এর পেছনে বিপুল অর্থ সাহায্য কে করছে ? আপনাদের জানতে ইচ্ছে করে না ? এই আন্দোলন এর উদ্দেশ্য দেশের মানুষ এর কাছে প্রমাণ করা যে দেশের মানুষ এই সরকারের পতন চাই এবং এই আন্দোলনের আরও একটা উদ্দেশ্য হলো সরকারের পক্ষের মানুষ জনের মনোবল ভেঙে দেওয়া। এই তৃতীয় ধাপ টাও আমেরিকা সফল ভাবে করতে পেরেছে।

বাকি শুধু চতুর্থ ও শেষ ধাপটা ।

চতুর্থ ধাপে: আমেরিকা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে একটা জাতীয় সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ধারণা কে তুলে ধরবে । এই সরকারে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ কে সামিল করার মাধ্যমে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে বার্তা দেবে যে , যতদিন বাংলাদেশে ভোট করানোর মতো অবস্থা না আসে ততদিন এই জাতীয় সরকারের নামের আড়ালে আমেরিকার তাবেদার তত্ত্বাবধায়ক সরকারই থাকুক ।

একবার যদি আমেরিকা এইরকম তত্ত্বাবধায়ক সরকার কে বাংলাদেশে বসাতে পারে, আমি নিশ্চিত আগামী ১০ বছর বাংলাদেশে কোন ভোট হবে না । আওয়ামী লীগ ক্ষমতা চ্যুত হলে যারা ভাবছেন তারা ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসবেন, তাদের আশা পূরণ হবে না । ক্ষমতায় থাকবে আমেরিকার তাবেদার তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

সুজিত দেবনাথ

শিক্ষক ও ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক

 

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...