নভেম্বর ৯, ২০২৪

জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে বর্ষাকাল চলতে থাকে। তার মাঝে জুলাই থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হয়। আর এ বৃষ্টির পানিতে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি এবং আক্রমণও বৃদ্ধি পায়। আর তাতে মানুষ আক্রান্ত হতে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এডিস মশা প্রতি তিন দিন পর পর ডিম দেয় এবং একটি স্ত্রী মশা তার জীবদ্দশায় ১৫০টি থেকে ৩০০টি ডিম দিতে পারে। একটি ডিম প্রায় ১ বছর পর্যন্ত নিষিক্ত না হয়ে থাকতে পারে এবং প্রয়োজনীয় পানি পেলে যে কোনো সময় ডিম ফুটতে পারে। তাহলে বোঝা যাচ্ছে কতটা শক্তিশালী এ এডিস মশার জীবনচক্র এবং মানুষকে আক্রমণের তীব্রতা।

এডিস মশার আক্রমণে মানুষ যে রোগে আক্রান্ত হয় তা হলো ডেঙ্গুজ্বর। এটি মানুষের শক্তি, স্মৃতিশক্তি, কর্মক্ষমতা, খাদ্য গ্রহণ সবকিছু ধীরে ধীরে শেষ করে দেয়। যার ফলে মানুষ আক্রান্তের চেয়েও দুর্বল হয়ে পড়ে ও অসুস্থ বেশি হয়।

এ ডেঙ্গুজ্বরের কোনো স্থায়ী চিকিৎসা বা প্রতিষেধক না বের হওয়ার সবাইকে সচেতন হয়ে থাকতে হবে। সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। সচেতনতাই পারে ডেঙ্গুজ্বর থেকে বাঁচাতে।

ডেঙ্গু সচেতনতায় করণীয়

* বাড়ির আঙিনার ঝোপঝাড় ও অতিরিক্ত পানি জমার জায়গা সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। ঝোপঝাড়ে কখনো তিন দিনের বেশি পানি জমে থাকতে দেওয়া যাবে না।

* বাড়ি বা বসবাসের কোথাও অপ্রয়োজনীয় পানি জমতে দেওয়া যাবে না। জমা পানিতে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি দ্রুত হয়।

* এডিস মশা যেহেতু দিনে বেশি কামড়ায়, তাই দিনেরবেলা ঘুমালে মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে।

ঘরের চারদিকের জানালায় নেট লাগাতে হবে।

* যেসব শিক্ষার্থী স্কুলে পড়াশোনা করতে যায় তাদের সব সময় ফুলপ্যান্ট এবং শার্ট পরিয়ে পাঠাতে হবে।

* বাড়ির ঝোপঝাড়ের পাশাপাশি বাসার বারান্দাও পরিষ্কার রাখতে হবে। বারান্দায় যদি অপরিষ্কার বা পানি জমে যায় তাহলে লার্ভিসাইড স্প্রে মেরে পরিষ্কার করতে হবে।

* বাড়ির ছাদের পরিষ্কারের দিকে বেশি নজর রাখতে হবে। সেখানে ছাদের কোণে অনেক সময় অপরিষ্কার এবং অব্যবহৃত অনেক কিছু পড়ে থাকে। সেগুলোতে তিন দিনের অধিক পানি জমে থাকতে পারে পাশাপাশি দুর্গন্ধযুক্ত কোনো পদার্থের সৃষ্টি হতে পারে। যা কিনা এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য সহায়ক হয়। এজন্য মশা নিরধক স্প্রে করতে হবে ছাদের কোণে এবং ছাদে অপ্রয়োজনীয় বা অপরিষ্কার বা পচা জিনিসপত্র থাকলে সেগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। কোনোভাবে পানিজাতীয় কিছু যার মাধ্যমে এডিস মশা বিস্তার ঘটতে পারে তা সরিয়ে ফেলতে হবে।

* আবার যেখানে স্বচ্ছ পানি জমে থাকতে পারে, সেসব যেমন ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে। মশা নিধনের স্প্রে, কয়েল, ম্যাট ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করতে হবে।

* বারান্দা বা ছাদে গাছের বা ফুল-ফলের টবে বা প্লাস্টিকের পলিথিনে যেন পানি না জমে থাকতে পারে সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে।

* অব্যবহৃত পানির পাত্র ধ্বংস অথবা উলটিয়ে রাখতে হবে, যেন পানি না জমে।

* অব্যবহৃত হাইকমোডে হারপিক ঢেলে ঢাকনা বন্ধ করে রাখতে হবে।

* এছাড়া লো-কমোডের প্যানে হারপিক ঢেলে বস্তা দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে।

* বাড়ির আশপাশে কোনো বদ্ধ জলাশয় রাখা যাবে না। বদ্ধ জলাশয় থাকলেও তাতে মশা নিরোধক স্প্রে করে রাখতে হবে।

* বাসার মধ্যে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ দূর করতে হবে।

* মশা মারার ব্যাট রাখুন।

* নিজেদের চলাচল জায়গায় বা শয়ন ঘরের পাশে কোনো পচা আবর্জনা স্তূপ রাখা যাবে না।

* বাসার মধ্যে অন্ধকার পরিবেশ দূর করতে হবে। আলো বাতাসের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

* ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...