মে ৬, ২০২৪

গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের আনা প্রস্তাবকে পুরোনো ভণ্ডামির প্রদর্শনী বলে উল্লেখ করেছে রাশিয়া। মূলত গাজায় যুদ্ধবিরতির খসড়া প্রস্তাব দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু রাশিয়া ও চীনের ভেটোর কারণে প্রস্তাবটি পাস হয়নি।

শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে ভেটো দিয়েছে দেশগুলো। ইতিপূর্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে অন্য দেশগুলোর আনা প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

নিরাপত্তার পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য-যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও চীন ভেটো ক্ষমতার অধিকারী। এই দেশগুলোর কোনো একটি কোনো প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিলে তা পাস হয় না।

নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১১ সদস্য প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছিল, বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল আলজেরিয়া। ভোটদানে বিরত ছিল গায়ানা। ভোটাভুটিতে অংশ নিয়ে জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের তোলা প্রস্তাবে ইসরায়েলকে রাফায় সামরিক অভিযান চালানোর কার্যকর সবুজসংকেত দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধবিরতির আহ্বান নেই, এমন ‘অর্থহীন প্রস্তাবের’ পক্ষে রাশিয়া ভোট দেবে না বলেও জানান তিনি।

উত্থাপিত প্রস্তাবকে অতিমাত্রায় রাজনীতিকরণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন রাশিয়ার দূত। তিনি বলেন, এই প্রস্তাব ইসরায়েলের দায়মুক্তি নিশ্চিত করবে। এমনকি প্রস্তাবে ইসরায়েলের অপরাধের বিষয়ে কোনো ধারণাই দেওয়া হয়নি।

বিপক্ষে ভোট দিয়ে জাতিসংঘে আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত অমর বেন্দজামা বলেন, খসড়া প্রস্তাব অপর্যাপ্ত ছিল এবং এটি ফিলিস্তিনিদের বিশাল দুর্ভোগ মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি কাউন্সিলকে বলেন, ‘যারা বিশ্বাস করে যে- ইসরাইলি দখলকারী ক্ষমতা তার আন্তর্জাতিক আইনী বাধ্যবাধকতা বজায় রাখতে বেছে নেবে তারা ভুল করছে।’

রাষ্ট্রদূত অমর বেন্দজামা আরো বলেন, ‘তাদের এই কল্পকথা অবশ্যয় পরিত্যাগ করতে হবে।’

আবার ভেটো দেওয়ার পর এ নিয়ে কথা বলেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার দূত ভাসিলি নেবাঞ্জা। তিনি বলেন, এই প্রস্তাব হলো যুক্তরাষ্ট্রের একটি ভণ্ডামি। যেখানে গাজায় প্রথমদিকে ইসরাইলকে থামাতে যুক্তরাষ্ট্র কিছু করেনি। সেখানে তারা এমন সময় যুদ্ধবিরতির কথা বলছে যখন ‘গাজা কার্যত পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আমরা এখানে একটি পুরোনো ভণ্ডামির প্রদর্শনী দেখেছি।’

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রচেষ্টার মধ্যেই ইসরায়েল সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। শুক্রবার তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বাড়ানো ও রাফাহ অভিযানের বিকল্প নিয়ে আলোচনার কথা জানিয়েছেন ব্লিঙ্কেন। এমন সময় তিনি ইসরায়েল সফর করছেন, যখন দুই দেশের সম্পর্কে ক্রমেই টানাপোড়েন বাড়ছে।

এদিকে, গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের আনা একটি প্রস্তাব রাশিয়া ও চীনের ভেটোর কারণে বাতিল হয়ে গেছে।

উত্তর গাজার একমাত্র আংশিক সচল হাসপাতাল আল-শিফায় অভিযান চালিয়ে কয়েক শ’ হামাস যোদ্ধাকে হত্যা ও গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। তবে সেখানে যোদ্ধাদের উপস্থিতির বিষয়টি অস্বীকার করেছে হামাস ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহতের সংখ্যা ইতিমধ্যে ৩২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

গত ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ব্লিঙ্কেন এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো মধ্যপ্রাচ্য সফর করছেন। সর্বশেষ গত বুধবার শুরু হওয়া এ সফরে তিনি দফায় দফায় এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সফরের প্রথম দিন ব্লিঙ্কেন সৌদি আরবে যান। তিনি সেখানে দেশটির অঘোষিত শাসক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে ব্লিঙ্কেন বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের দাবিদাওয়ার ‘ব্যবধান কমে এসেছে’। ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করা নিয়েও ‘ভালো অগ্রগতি হয়েছে’।

পরদিন বৃহস্পতিবার মিসরের রাজধানী কায়রোয় আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন শীর্ষ এই মার্কিন কূটনীতিক। পরে তিনি বলেন, গাজায় টেকসই যুদ্ধবিরতির বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত অবসানে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

ব্লিঙ্কেনের ইসরায়েল সফরের সময় গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়েও আলোচনা চলছিল কাতারের দোহায়। এ বৈঠকে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের পরিচালক ডেভিড বার্নিয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণের কথা।

এমন সময় শীর্ষ এই মার্কিন কূটনীতিক ইসরায়েল সফর করছেন, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বক্তব্য ঘিরে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। বাইডেন বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের অভিযান ‘বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে’ এবং এতে অনেক বেশিসংখ্যক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘ইসরায়েল রাফায় অভিযান চালাবে, ব্লিঙ্কেনকে তা তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, এতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন থাকবে। যদি প্রয়োজন হয়, আমরা একা

ই এ অভিযান চালাব।’

 

 

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *