মে ১৮, ২০২৪

করোনার বাধা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিলো দেশের অর্থনীতি। এমন সময় শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর প্রভাবে ২০২২ সালের মার্চ থেকে দেশের আর্থিক খাতে ডলার সংকট দেখা দেয়। চাপ সামাল দিতে আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণে চলতি অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়। এর ফলে গত এক বছরে রিজার্ভ কমেছে ১০ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। আশানুরূপ বিদেশি বিনিয়োগ না আসা, নতুন বাণিজ্য ঋণ কমে যাওয়া এবং আগে নেওয়া ঋণ পরিশোধের চাপে ডলার সংকট দ্রুত কাটছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) সর্বোচ্চ ৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার বিক্রি করেছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে চলতি জুন মাসে রেমিট্যন্স আসায় ব্যাপক উত্থান হয়েছে। এই মাসের প্রথম ২৫ দিনে প্রবাসীরা ২০২ কোটি ডলার পাঠিয়েছে। চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে জুনের ২৫ জুন পর্যন্ত ২ হাজার ১০২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যার পরিমাণ এর আগের অর্থবছরের পুরো সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি। বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। গত বছর একই সময়ে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার।

ডলারের দর হু হু করে বাড়তে থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় গত সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাংকগুলো কেনা ও বিক্রির সর্বোচ্চ দর ঠিক করে দিচ্ছে। যদিও অনেক ব্যাংক নির্ধারিত দরের বেশিতে ডলার কিনছে। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে কয়েক দফা সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ গত ২১ মে বিএফআইইউ ৭টি ব্যাংকের রেমিট্যান্স-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নিয়ে বৈঠক করে। এরপর এখনও অনেক ব্যাংক নির্ধারিত দর মানছে না। অনেক ব্যাংক বেশি পরিমাণ টাকা খরচ করে ডলার ক্রয় করছে।

গত ১৫ জুন রিজার্ভ ছিল ২৯ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। তবে গতকাল তা আবার বেড়ে ৩১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে ২০২১ সালের আগস্টে। তবে কমতে কমতে গত ৮ মে তা ৩০ বিলিয়নের নিচে নামে। সোমবার এডিবির বাজেট সহায়তার ৪০ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংক থেকে পাওয়া গেছে ১২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। সম্প্রতি আরও কিছু ঋণ পাওয়ায় রিজার্ভের পরিমাণ বেড়েছে।

এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৮০ কোটি ডলারে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৫২৯ কোটি ডলার। এ অবস্থায় কোনো ব্যাংক যেন আমদানি দায় পরিশোধে ব্যর্থ না হয়, সে জন্য রিজার্ভ কমলেও ডলার বিক্রি করে যাচ্ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যায়। তবে রেমিট্যান্স গতি ফেরায় ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ পাওয়ায় আবারও রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।

তবে প্রকৃত রিজার্ভ আরও কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব পদ্ধতি আইএমএফ মানে না। কারণ রিজার্ভের অর্থে বিদেশে বিভিন্ন বন্ড, মুদ্রা ও স্বর্ণে বিনিয়োগ; রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল গঠন; বাংলাদেশ বিমানকে উড়োজাহাজ কিনতে সোনালী ব্যাংককে ধার; পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচিতে অর্থ দেয়া এবং শ্রীলঙ্কাকে অর্থ ধার দেয়া বাবদ খরচ ৮২০ কোটি ডলার রয়েছে, যা এখন ৬০০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। তবে মুদ্রানীতিতে আইএমএফ ও বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমান যে পদ্ধতিতে রিজার্ভ হিসাব করে, তা মেনে চলার ঘোষণা দেয়া হয়। অর্থাৎ দুই পদ্ধতিতে রিজার্ভ হিসাব করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে নিট রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করবে না।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *