মে ৬, ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে গেলেও তার সরকার দেশের অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলছি। আমরা বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছি। একদিন এই বাংলাদেশ একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ তার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা ডাক্তার এস এ মালেক স্মরণে ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’ আয়োজিত আলোচনা সভায় ভাষণে এ কথা বলেন।

তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু পরিষদের কলাবাগান অফিসে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যার পর এক দুঃসময়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে ড. এস এ মালেকের অবদানের কথা স্মরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সামনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে যে কয়জন অবদান রেখে গেছেন তার মধ্যে ডা. এস এ মালেক একজন। অত্যন্ত বৈরি পরিবেশের মধ্যেও তিনি জাতির পিতার আদর্শকে সামনে নিয়ে এসেছেন এবং বিশেষ করে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও নেতাকর্মীদের শিক্ষা দেওয়া এবং তাদের জানানোর বিষয়টি তিনি অনেক দক্ষতার সঙ্গে করে গেছেন।

তিনি বলেন, তার লেখনীর হাত ভাল ছিল। সেই লেখনীর মাধ্যমে জাতির পিতার আদর্শকে তুলে ধরার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ কেমন হবে সেটাও তিনি লিখে গেছেন। আমি মনে করি, সেগুলো আমাদের জন্য একটা বিরাট সম্পদ হিসেবে থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রচার, মানুষের মাঝে জনমত সৃষ্টি, লেখালেখি এবং সংগঠন করার ক্ষেত্রে তার অনেক অবদান রয়েছে। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, স্কুলজীবন থেকে রাজনীতি করলেও তিনি কখনো আওয়ামী লীগের সভাপতি হবেন তা ভাবেননি। কিন্তু, ১৯৮১ সালের কাউন্সিলের মাধ্যমে দল আমার অনুপস্থিতিতে সভাপতি করায় আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিতে হয়েছিল।

তিনি বলেন, ড. মালেক ও মোহাম্মদ হানিফ তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কারণ তারা জনমত তৈরি করেছেন এবং দলীয় ফোরামে নিয়ে গেছেন।

এমনকি তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার জন্য বার বার জোর দেওয়ার জন্য ডা. এস এ মালেককে তিরস্কার করেছিলেন বলেও উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

আলোচনা সভায় সিনিয়র সাংবাদিক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য অজিত কুমার সরকার ডা.এস এ মালেক ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ- আলোয় আঁকা সাহসী মানুষের প্রতিকৃতি’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.আখতারুজ্জামান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড.আব্দুল খালেক এবং ডা. এস এ মালেকের ছেলে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক শেখ আবদুল্লাহ আল মামুন।

ডা. মালেককে রাজনীতি সচেতন হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল।

মুক্তিযুদ্ধে ড. মালেকের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডা. মালেক ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে অত্যন্ত বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। তার যুদ্ধক্ষেত্র কুষ্টিয়ায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এয়ার রেইড চলার সময়ও তিনি বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডা. মালেক ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে রাজবাড়ী থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ’৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পর খুনি মোশতাক নিজেকে অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে অনেক সংসদ সদস্যকে আলোচনার জন্য ডেকেছিল। ডা. মালেক সেখানে যাননি এবং অনেককে সেখানে যোগদান থেকে বিরত রাখেন। পাশাপাশি দেশের মধ্যে খুনিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। ফলে এক সময় ভারতে তাকে আশ্রয় নিতে হয়।

বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ থাকায় তাকে ছোটবেলা থেকেই মালেক ভাই হিসেবে ডেকে এসেছেন বলেও বঙ্গবন্ধুকন্যা উল্লেখ করেন।

তিনি রাজনৈতিক নেতা হলেও কোন ধরনের অহমিকা তার ছিল না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা প্রয়াত ডা. মালেক সম্পর্কে বলেন, আওয়ামী লীগের সাবেক এই উপদেষ্টা খুব সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন এবং যা অর্থ পেতেন তাই মানুষের কল্যাণে ব্যয় করতেন। একজন এমবিবিএস চিকিৎসক হয়েও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করতেন বলে তার রোগ নির্ণয় এবং নিরাময় অত্যন্ত কার্যকর ছিল। এক সময় প্রধানমন্ত্রী নিজেও তার হোমিওপ্যাথি ওষুধ খেয়ে আরোগ্য লাভ করেছেন বলে জানান।

’৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার ভূমিকা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে নিজ হাতে ঝাড়ু নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন রাস্তা পরিষ্কার ও ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করতে নেমে পড়েন। মানুষ যাতে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে না পড়ে সেজন্য ব্যবস্থা নেন।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু পরিষদ গঠন প্রসঙ্গে বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার প্রতিবাদ করতে এবং তার আদর্শ জনসম্মুখে তুলে ধরার জন্যই এর সৃষ্টি। কেননা সে সময় শেখ মুজিব নামটাও নিষিদ্ধ ছিল। আর মোশতাক রাষ্ট্রপতি হয়েই জিয়াকে সেনাপ্রধান করার ৩ মাসের মধ্যে জিয়া ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করলে এই বঙ্গবন্ধু পরিষদই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে প্রচার করার প্রয়াস নেয়। বঙ্গবন্ধু পরিষদ সৃষ্টির পেছনে ড. মতিন চৌধুরীর বলিষ্ঠ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে এর দায়িত্বে থাকা বেগম সুফিয়া কামাল, বিচারপতি কে এম সোবহানসহ অন্যদের অবদানকেও স্মরণ তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই এ দেশ গড়ে তুলছি। করোনা অতিমারি এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা প্রতিকূলতার মাঝে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখাই আমাদের প্রচেষ্টা। এজন্য আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। ইনশা আল্লাহ এই বাংলাদেশ এক দিন উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবেই গড়ে উঠবে।

মালেক ভাই যদি বেঁচে থাকতেন হয়ত আরও বেশি দেখে যেতে পারতেন। তবে, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি এ পর্যন্ত তিনি জেনে গেছেন।

তিনি মরহুম ডাক্তার এস এ মালেকের রুহের মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদকে সম্ভব সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন।

খবর: বাসস

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *