চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে পা ফেলেছে ভারত, যান পাঠিয়েছে সূর্যের দিকে আর এবার সম্পূর্ণভাবে দেশেই তৈরি মহাকাশযানে চেপে রওনা হওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন চার ভারতীয়। দক্ষিণ ভারতের কেরালায় ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার একটি ইউনিটে চলছে তাদের কঠোর প্রশিক্ষণ। এর আগে ১৩ মাস তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে রাশিয়ায়।
যদি এই মহাকাশ অভিযান সফল হয়, তাহলে ভারত হবে চতুর্থ দেশ, যারা নিজেদের তৈরি মহাকাশযানে করে মহাকাশে মানুষ পাঠাতে পেরেছে।
এর আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন এভাবে মহাকাশে মানুষ পাঠিয়েছে।
যদিও চার দশক আগে প্রথমবার কোনও ভারতীয় মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিলেন। তবে সেই মহাকাশচারী, রাকেশ শর্মা, গিয়েছিলেন রাশিয়ার যানে চেপে। কিন্তু এবার মহাকাশ যাত্রা হবে ভারতের নিজেদের যানে।
ভারতের এই মহাকাশ অভিযানের নাম ‘গগনযান’।
তবে মনুষ্যবাহী মহাকাশযানেরও আগে একটি রোবট পাঠাবে ভারত। এই রোবটটিকে নারী হিসাবে গড়া হয়েছে, তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ব্যোম-মিত্রা’।
ব্যোম একটি সংস্কৃত শব্দ, যার অর্থ মহাকাশ। ‘ব্যোম-মিত্রা’ মহাকাশে যাবে এ বছরই, আর ২০২৫ সালে রওনা হবেন তিন মহাকাশচারী।
কারা এই মহাকাশচারী?
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চার মহাকাশচারীর পরিচয় প্রকাশ করেছেন। এরা চারজনই ভারতীয় বিমান বাহিনীর পাইলট।
এই চার অফিসার হলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন প্রশান্ত বালাকৃষ্ণন নায়ার, গ্রুপ ক্যাপ্টেন অজিত কৃষ্ণন, গ্রুপ ক্যাপ্টেন অঙ্গদ প্রতাপ এবং উইং কমান্ডার শুভাংশু শুক্লা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরোর প্রধান এস সোমনাথ ওই চার মহাকাশচারীর জামায় ব্যাজ লাগিয়ে দেন।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন নায়ার ন্যাশানাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি ও এয়ার ফোর্স অ্যাকাডেমি থেকে পাশ করে ভারতীয় বিমানবাহিনীতে কমিশন্ড হন ১৯৯৮ সালে। বর্তমানে তিনি বিমান চালনা প্রশিক্ষক এবং একজন ‘টেস্ট পাইলট’ তবে সুকোই, মিগ, হক ইত্যাদি নানা ধরনের বিমান চালিয়েছেন তিনি।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন অজিত কৃষ্ণান ও ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমির প্রাক্তন ছাত্র। তিনি বিমান বাহিনীতে যোগ দেন ২০০৩সালে। প্রায় ২৯০০ ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা আছে মি. কৃষ্ণানের। জাগুয়ার, ডর্নিয়র, নানা মডেলের মিগ, সুকোই, এএন-৩২-র মতো নানা ধরনের বিমান চালিয়েছেন বর্তমান প্রশিক্ষক ও টেস্ট পাইলট মি. কৃষ্ণান।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন অঙ্গদ প্রতাপও প্রথম দুজনের মতো এখন প্রশিক্ষক ও টেস্ট পাইলট। তার বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা ২০০০ ঘণ্টার, যার মধ্যে হক, ডর্নিয়র, এএন-৩২, সুকোই এবং নানা ধরনের মিগ বিমান রয়েছে।
চারজনের মধ্যে সব থেকে বয়স কম উইং কমান্ডার শুভাংশু শুক্লার। বিমান বাহিনীর যুদ্ধ বিমান বিভাগে তিনি যোগ দেন ২০০৬ সালে। তার বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা ২০০০ ঘণ্টার। তিনিও বাকি তিনজনের মতোই সুকোই, মিগ ছাড়াও জাগুয়ার, ডর্নিয়র এবং এএন-৩২ বিমান চালিয়েছেন।
তিন দিন থাকবেন মহাকাশে
এই অভিযানে তিন মহাকাশচারীকে নিয়ে গগনযান ৪০০ কিলোমিটার দূরের একটি কক্ষপথে পাঠানো হবে। তাদের তিন দিন পরে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হবে।
কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, বিমানবাহিনীর একদল পাইলটের মধ্যে থেকে এই চারজনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
কঠোর শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে সবাইকে।
প্রাথমিক ভাবে রাশিয়ায় ১৩ মাসের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এই মহাকাশচারীরা। তার পরে এখনও চলছে কঠোর প্রশিক্ষণ।
মহাকাশচারীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও দেখানো হয়, যাতে ওই মহাকাশচারীদের প্রশিক্ষণের কিছু কিছু মুহূর্ত তুলে ধরা হয়েছে।
তাদের রোজকার রুটিনের মধ্যে রয়েছে জিম, সাঁতার আর যোগব্যায়াম।
গত বছর অক্টোবরে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে মহাকাশযানটিতে কোনও ত্রুটি দেখা দিলে মহাকাশচারীরা নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পারবেন।
৪০ বছর পরে আবারও মহাকাশে ভারতীয়
গগনযান প্রকল্পটির জন্য ৯০ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। পরবর্তী মহাকাশ অভিযানের পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছে ভারত। জানানো হয়েছে যে ২০৩৫ সালে তারা মহাকাশ স্টেশন নির্মাণ করবে আর ২০৪০ সালের মধ্যে চাঁদে মানুষ পাঠাবে।
এর আগে, ১৯৮৪ সালে প্রথমবার কোনও ভারতীয় মহাকাশে গিয়েছিলেন। তিনিও বিমান বাহিনীরই পাইলট ছিলেন।
সেই মহাকাশচারী হলেন রাকেশ শর্মা। মাত্র ২১ বছর বয়সে বিমান বাহিনীতে যোগ দেওয়া রাকেশ শর্মা যখন ৭১-এর যুদ্ধে ২১টি অভিযানে অংশ নিচ্ছেন, তখন তারা ২৩ বছর বয়স পূর্ণ হয় নি। আর যখন মহাকাশে গেলেন, তখন তার বয়স ৩৫।
তিনি প্রথম ভারতীয় এবং বিশ্বের ১২৮ তম মানব, যিনি মহাকাশে পাড়ি জমিয়েছিলেন।
সূত্র: বিবিসি