নভেম্বর ২৫, ২০২৪

বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে জড়িত ৯৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সমন্বিত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডা। এর মধ্যে ১৩ দেশের ৩৭ ব্যক্তি বাইডেন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে। যুক্তরাজ্য সরকার ৪৬ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের সম্পদ জব্দ করবে। এ ছাড়া মিয়ানমারের জান্তাপ্রধানসহ ১৩ ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে কানাডা সরকার।

১০ ডিসেম্বর মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার ৭৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার নতুন করে তিনটি দেশ সমন্বিত এ পদক্ষেপ নিয়েছে। ১০ ডিসেম্বরকে বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

নিষেধাজ্ঞার এই দীর্ঘ তালিকায় আছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মানব পাচার থেকে শুরু করে আফগানিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তি ও হাইতির জনগণকে শোষণকারী গ্যাং নেতারা। জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য করায়ও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হয়েছে।

অটোয়া ও লন্ডনকে নিয়ে সমন্বিত পদক্ষেপের কারণ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মিত্রদের সঙ্গে সমন্বিত হলে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান বৃদ্ধির জন্য আমাদের পদক্ষেপ শক্তিশালী এবং আরও টেকসই হয়।’

তিনি বিবৃতিতে বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের জবাবদিহিতে আনার জন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বে বর্তমানে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষতিকর দিকটিতে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধ বা সংঘাত সম্পর্কিত যৌন সহিংসতায় জড়িতরা, জোরপূর্বক শ্রমে নিয়োজিত করা ব্যক্তিরা এবং অন্য দেশের মানুষের ওপর নিপীড়নকারীরা এর আওতায় পড়েছে। এসব আচরণের জন্য জবাবদিহিকে উৎসাহিত করবে আমাদের পদক্ষেপ।

তিনি বলেন, আমাদের সমর্থন থাকবে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ এবং প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের প্রতি। এর মধ্যে আছেন রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী, নারী, নাগরিক সমাজের নেতা ও কর্মী, মানবাধিকারের পক্ষের কর্মী ও পরিবেশবাদী।

যুক্তরাষ্ট্র ৩৭ জন ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এর মধ্যে ২০ জন ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র দপ্তর ও অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মিলিতভাবে এসব ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এ দফায় আফগানিস্তান, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো, হাইতি, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, লাইবেরিয়া, চীন, রাশিয়া, দক্ষিণ সুদান ও সুদান, সিরিয়া, উগান্ডা ও জিম্বাবুয়ের নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের দু’জন আফগানিস্তান সরকারের মন্ত্রী। বলা হয়েছে, তারা দেশটিতে মেয়েদের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ বন্ধ করার মাধ্যমে নারী নিপীড়নে জড়িত। ইরানের দুই গোয়েন্দা কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রশাসন বলছে, তারা দেশের বাইরে ইরানের সরকারবিরোধীদের ওপর সহিংসতার পরিকল্পনা করেছিলেন। চীনের জিনজিয়ানে উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতনের ঘটনায় দেশটির দুই কর্মকর্তাও এসেছেন নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতায়।

নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সম্পদ ভোগদখল করতে পারবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যাংকে থাকা অর্থ তুলতে পারবেন না। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সঙ্গে কোনো ব্যবসা ও লেনদেন করতে পারবেন না।

এদিকে ৪৬ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সম্পদ জব্দ এবং তাদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।

দেশটির নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া নিপীড়নকারী শাসকগোষ্ঠী এবং অপরাধীদের আমরা সহ্য করব না। তিনি আরও বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার ৭৫ বছর পরও যারা মানুষের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করবে, তাদের পেছনে নিরলসভাবে লেগে থাকবে যুক্তরাজ্য ও আমাদের মিত্ররা।

যুক্তরাজ্য যাদের টার্গেট করেছে, তার মধ্যে আছে বেলারুশের বিচার বিভাগের ১৭ জন সদস্য। তারা অধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় অভিযোগ গঠন করেছেন। বাধ্যতামূলকভাবে নারীদের হিজাব পরার আইন চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগে ইরানের পাঁচজনের বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। অন্যদিকে কম্বোডিয়া, লাওস ও মিয়ানমারের মানুষ পাচারের কারণে ৯ জনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে রাশিয়ার চার ব্যক্তির পাশাপাশি মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কানাডা।

এর আগে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধেও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। চলতি বছরের ২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। নিষেধাজ্ঞার আওতায় বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা আছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সে সময় জানানো হয়, ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাও এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার ক্ষেত্রে আরও যারা দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত হবে, ভবিষ্যতে তাদের বিরুদ্ধেও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে পারে। এ তালিকায় থাকবেন বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তাবা হিনীর সদস্যরা।

 

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...