ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন হাজারও ইসরায়েলি নাগরিক। ইসরায়েলি নতুন ডানপন্থি এই জোট সরকারের দেশের বিচার বিভাগকে সংস্কারের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে শনিবার (১৪ জানুয়ারি) তেল আবিবে ৮০ হাজারের বেশি ইসরায়েলি বিক্ষোভকারী প্রতিবাদ-সমাবেশ করেন।
নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন নতুন এই সরকারকে ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে ডানপন্থি বলে মনে করা হচ্ছে। রোববার (১৫ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ইসরায়েলের নতুন ডানপন্থি জোট সরকার দেশের বিচার বিভাগের সংস্কার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে শনিবার তেল আবিবে সমাবেশ করেছে ৮০ হাজারেরও বেশি ইসরায়েলি। এসব সংস্কার বাস্তবায়ন হলে ইসরায়েলের পার্লামেন্টের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের রায়গুলোকে বাতিল করা সহজ হবে।
ইসরায়েলের বিচার ব্যবস্থাকে সংশোধন এবং সুপ্রিম কোর্টকে দুর্বল করার একটি পরিকল্পনা সম্প্রতি উন্মোচন করেছেন নতুন ইসরায়েলি বিচারমন্ত্রী। আর সেটি হলে, সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তগুলোকে অগ্রাহ্য করার অনুমতি পাবে দেশটির পার্লামেন্ট।
বিবিসি বলছে, শনিবার প্রতিবাদ-সমাবেশে অংশ নেওয়া বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর প্রস্তাবিত পরিবর্তনকে গণতান্ত্রিক শাসনের ওপর আক্রমণ বলে বর্ণনা করেছেন। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, জেরুজালেমে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের বাইরে এবং উত্তরাঞ্চলীয় শহর হাইফাতেও বিক্ষোভ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এছাড়া তেল আবিবের প্রধান সড়ক আয়লোন হাইওয়ে অবরোধ করার চেষ্টা করার সময় একদল বিক্ষোভকারী পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
সমালোচকরা বলছেন, নেতানিয়াহু সরকারের এই সংস্কার পরিকল্পনা ইসরায়েলের বিচারিক স্বাধীনতাকে পঙ্গু করবে, দুর্নীতিকে আরও উৎসাহিত করবে, সংখ্যালঘুদের অধিকার নষ্ট করবে এবং ইসরায়েলের আদালত ব্যবস্থাকে বিশ্বাসযোগ্যতা থেকে বঞ্চিত করবে।
আর এ কারণেই শনিবারের বিক্ষোভের ব্যানারে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন নতুন জোটকে লজ্জার সরকার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইহুদি এই দেশটির যেসব ব্যক্তি সম্ভাব্য এই সংস্কার পরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন, তাদের মধ্যে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এসথার হায়াত এবং দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেলও রয়েছেন।
তেল আবিবে বিবিসির সামান্থা গ্রানভিলে বিক্ষোভকারীদের ইসরায়েলি পতাকার পাশাপাশি হিব্রু ভাষায় পোস্টার বহন করতে দেখেছেন এবং নেতানিয়াহুর মুখের ওপর ক্রস (X) আঁকা ছবিও বহন করতে দেখেছেন। সেখানে একদল তরুণীর মুখে লাল রঙের হাতের ছাপ দেখা গেছে এবং তারা সরকারকে এটাই বোঝাতে চান যে, তারা আর চুপ থাকবেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বিক্ষোভকারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার বাবা-মা অগণতান্ত্রিক শাসন থেকে গণতন্ত্রে বসবাস করার জন্য (ইসরায়েলে) অভিবাসন করেছিলেন। তারা স্বৈরাচারী শাসন থেকে এখানে স্বাধীনভাবে বাঁচতে এসেছিলেন। তাই (এখানকার স্বাধীনতা) ধ্বংস হতে দেখাটা হৃদয় বিদারক।’
বিবিসি বলছে, গত ডিসেম্বরে নেতানিয়াহুর নতুন জোট সরকার শপথ নেওয়ার পর ইসরায়েলে এটাই সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। ইহুদি এই দেশটির বিরোধী দলগুলো ‘গণতন্ত্র বাঁচাতে’ এবং পরিকল্পিত বিচারিক সংস্কারের প্রতিবাদে ইসরায়েলিদের সমাবেশে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে নতুন সরকার গঠনের বিষয়টি আস্থা ভোটে পাস হয়ে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেন নেতানিয়াহু। আস্থা ভোটে পার্লামেন্টের ১২০ সদস্যের মধ্যে ৬৩ জন নতুন সরকারের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। আর বিপক্ষে ভোট দেন ৫৪ জন।
নেতানিয়াহুর নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় এমন রাজনীতিবিদও রয়েছেন যিনি গত বছরের শেষের দিকে কর ফাঁকির কথা স্বীকার করেছিলেন। অতি-ডানপন্থি ওই রাজনীতিক একবার তার বাড়িতে এমন একজন ব্যক্তির প্রতিকৃতি রেখেছিলেন যিনি বহু ফিলিস্তিনি ইবাদাতকারীর ওপর গণহত্যা চালিয়েছিলেন।
এছাড়া ৭৩ বছর বয়সী নেতানিয়াহু নিজেও আদালতে দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়ছেন এবং ইতোমধ্যেই তিনি ইসরায়েলের ইতিহাসে অন্য যে কারও চেয়ে বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের ইতিহাস গড়েছেন।
নেতানিয়াহু এর আগে ১৯৯৬ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল এবং ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তিনি তৃতীয় মেয়াদে ইহুদি এই দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন।