দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জনগণের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচন ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বলেও মনে করেন তিনি। আজ মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) গণভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫ সালের পর এবারের নির্বাচন সবচেয়ে সুশৃঙ্খল, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। দুই-চারটা দল ভোটে না এলে সমস্যা ছিল না। ইতিহাসে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর নির্বাচনের নামে ভোট চুরি করা হতো। সেনাশাসকদের পকেট থেকে গড়ে উঠতো রাজনৈতিক দল। প্রতিটি মানুষ তাদের দ্বারা ক্ষতির স্বীকার হয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের জন্ম সেভাবে নয়। জনগণের জন্যই আওয়ামী লীগের সৃষ্টি।’
তারেক রহমানকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, নিজে লন্ডনে বসে পায়েস খায় আর পল্টনে নেতাদের মাঠে নামায়। ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে কিন্তু দেশবাসীকে বেগম খালেদা জিয়াও ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারেননি। ওদের কোনো লজ্জা নেই।
নির্বাচন ঠেকাতে অনেক অপচেষ্টা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা নির্বাচনে না আসায় কিচ্ছু যায়-আসে না। সাত সমুদ্র তেরো নদী থেকে অহি নাজিল হয়, ভোট না করার জন্য। তারা তাদের মুরুব্বিদের কথা শুনেছে। তাদের পরামর্শ শুনলে বাংলাদেশে আর চলা লাগবে না। নির্বাচন হতে দেবে না, সেসব হম্বিতম্বি কোথায় গেল তাদের?
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ওরা যখন নির্বাচন বন্ধের পাঁয়তারা করেছিল, তখন আমরা নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছি। এবারের নির্বাচন নিয়ে আর বলতে পারবে না যে, রাতে ভোট দিয়েছে। এবার তো ব্যালট গেছে ভোর বেলাতে।’
সুশৃঙ্খল নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে সাধুবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে এ নির্বাচন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। যারা এ নির্বাচনে আসেননি, তারা এখন হতাশায় ভুগছেন। তাদের বলবো, হতাশার কোনো কারণ নেই। আপনারা এ দেশেরই মানুষ।’
দেশের জনগণকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের দল ছাড়া সাধারণ মানুষ ভোট দিয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। এতো দলের মধ্যে দু-চারটা দল নির্বাচনে না এলে কিছু হয় না। ১০০ বছরের বুড়ো মানুষও ভোট দিয়েছেন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দিয়ে মানুষ প্রমাণ করেছে, বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।
পরাজিত প্রার্থীদের উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণ যাকে ভোট দিয়েছে, তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। কারো বিরুদ্ধে কোনো ক্ষোভ রাখবেন না। সবাই শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান ধরে রাখবেন। কোনোভাবেই সংঘাত-সংঘর্ষে জড়াবেন না। নির্বাচন নিয়ে যারা বড় খেলা খেলতে চেয়েছিল, তারা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। যারা ব্যর্থ হয়, তাদের প্রতিহিংসা জাগ্রত হয়। এখন যদি আপনারা গোলমাল করেন, তাহলে সেই সুযোগ নিতে চাইবে ওই চক্রান্তকারীরা।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের আস্থা-বিশ্বাস আমাদের ওপর আছে। সরকার গঠনের কোনো ভয় ছিল না আমাদের। কারণ জনগণ যা চাইবে, সেটাই হবে এবং সেটাই হয়েছে এবারের নির্বাচনে। ১২০ বছর বয়সী বৃদ্ধ নারী শেখ হাসিনাকে ভোট দিতে ছেলের কোলে উঠে কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে পারে, সেটা আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘অনেক চক্রান্ত আছে দুর্ভিক্ষ ঘটানোর। কিন্তু তেমন কোনো পরিস্থিতি যাতে না আসে, সেজন্য আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কোথাও যেনো কোনোরকম সংঘাত তৈরি না হয়। পেছনে আমাদের শত্রু লেগেই আছে, তাদের কোনো শিক্ষা হয় না ‘
দেশের মানুষ যে ম্যান্ডেট দিয়েছে, তা নিয়েই পথ চলতে হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নবনির্বাচিত এমপিদের শপথের পর সরকার ও মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। সংসদীয় রীতিমাফিক সবকিছু হবে।