করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বে বিভিন্ন সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে বছরের শুরু থেকে বাংলাদেশে চলছে ডলার সংকট। চাপ সামাল দিতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) বেড়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ১৫৪ কোটি ৫০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে জুলাই-অক্টোবর ১১২ কোটি ৯০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিভিন্ন খাতে মোট যে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসে, তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ দেশে নিয়ে যাওয়ার পর অবশিষ্ট অঙ্ককে নিট এফডিআই বলা হয়। আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগও আগের বছরের চেয়ে ৪১ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেড়ে ৬০ কোটি ৯০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত বছর একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪২ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন অর্থসূচককে বলেন, আমাদের দেশের এফডিআইর আকার অনেক ছোট। এটি আরও দুই তিন গুণ বৃদ্ধি পেলেও তেমন বড় হবে না। অনেকে লাভের অর্থ দেশে না নিয়ে ফের বিনিয়োগ করেছে। তাই বলা যায়, বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ তেমন বড় কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না। তবে বড় উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে কিছুটা সুফল পাওয়া যাবে।
করোনার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর বিনিয়োগ আসার কিছুটা আবহ তৈরি হয়েছিলো। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে মূল্যস্ফীতি আরও এক দফা বেড়েছে। একইসঙ্গে যুদ্ধের কারণে বেড়েছে ডলারের বিনিময় হার। এর ফলে দেশে ডলার সংকটের মধ্যে অর্থনীতিতে ব্যাপক চাপ বাড়ছে। এসব সংকটের মধ্যে কিছুটা আশা দেখাচ্ছে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৪৭০ কোটি ৮০ লাখ (৪.৭১ বিলিয়ন) ডলারের এফডিআই এসেছিল দেশে, যা ছিল আগের বছরের (২০২০-২১) চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি। নিট এফডিআই বেড়েছিল আরও বেশি, ৬১ শতাংশ। গত অর্থবছরে নিট এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল ২১৮ কোটি ডলার।
এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩২৩ কোটি ৩০ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। নিট বিনিয়োগের অঙ্ক ছিল ১২৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল দেশে। এর মধ্যে নিট এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল ২৬৩ কোটি ডলার।