নভেম্বর ২৬, ২০২৪

বাস, লঞ্চ, ট্রেন ও টার্মিনালসহ গণপরিবহনে ৩৬ শতাংশ নারী নিয়মিত যৌন হয়রানির শিকার হন। এছাড়াও গণপরিসরে ৮৭ শতাংশ নারী জীবনে অন্তত একবার যৌন সহিংসতার শিকার হন। আর ৬৬ শতাংশ নারী কয়েকবার এবং ৭ শতাংশ নারী বারবার নানা ধরনের যৌন হয়রানির শিকার হন। তবে হয়রানির শিকার ৩৬ শতাংশ নারী প্রতিবাদ করেছেন বলে অনলাইনে পরিচালিত জরিপে উঠে এসেছে। ইউএনডিপি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও সেন্টার ফর ইনফরমেশন-এর যৌথ উদ্যোগে এ জরিপ করা হয়।

সোমবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে গণপরিসর ও গণপরিবহনে নারী ও কন্যাদের প্রতি সংঘটিত সহিংসতা, নির্যাতন ও নিপীড়ন বন্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে গণপরিসর ও গণপরিবহনে নারী ও কন্যার নিরাপত্তা চাই শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ইউএনডিপি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও সেন্টার ফর ইনফরমেশন-এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত অনলাইন জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়।

গণপরিসরে ও গণপরিবহনে বিভিন্ন সময়ে নারীর প্রতি সংঘটিত ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির ঘটনা উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, অনেক ক্ষেত্রে নারী ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার বিচারহীনতাই নারীকে আরও বেশি অনিরাপদ অবস্থানে নিয়ে গেছে। যার ফলশ্রুতিতে ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার মামলায় মাত্র ৩ শতাংশ অভিযুক্ত ব্যক্তি শাস্তি পায়। বাকিরা নানাভাবে পার পেয়ে যান।

এতে বলা হয়, টেকসই উন্নয়নের অগ্রগতি নির্ধারণে যে ৩৯টি নির্দেশক তৈরি করা হয়েছে তার মধ্যে ১১টি গণপরিবহনে ২০টি আসনে নারী-শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। যা ২০৩০ সালের মধ্যে নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, আমাদের সমাজ পরিবর্তন, দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন একদিনে আসবে না। আমাদের সমাজে ছেলে মেয়েরা নানা বৈষম্যমূলক অবস্থার মধ্য দিয়ে বড় হয়। এ ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের জন্য এ রকম আলোচনা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে। পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে জোরালো ভূমিকা পালনের জন্য আহ্বান জানান তিনি। গণপরিবহনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল করা হয়েছে। প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে শিগগির।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, গণপরিবহনে ও গণপরিসরে নারীর চলাফেরায় নানা সংকট আছে। যার জন্য পরিকল্পনাকারী ও নীতিনির্ধারকদের নিয়ে মতবিনিময় হওয়া প্রয়োজন। গণপরিবহন সংবেদনশীল করে গড়ে তোলার জন্য প্রশাসন, আইন বাস্তবায়নকারী, গণপরিবহন মালিকদের জন্য প্রশিক্ষণ চালুর আহ্বান জানান তিনি।

নিরাপদ সড়ক চাই-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, চালকদের মানবিক আচরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণের অভাব আছে। তারাও নানা বঞ্চনা ও নির্যাতনের শিকার। তিনি পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য শিশুদের মানুষ করার দায়িত্ব ও তাদের মূল্যবোধ তৈরিতে পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, গণপরিবহনকে নারীবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পরিবহন সেক্টরের জন্য

আলোচনায় সবার দেওয়া সুপারিশ নিয়ে কাজ করতে চাই। নারী নিযাতনের বিরুদ্ধে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কাজ করার আশ্বাস দেন তিনি।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...