ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি কমায় বন্দরে কমেছে রাজস্ব আদায়। চলতি অর্থবছরের গত চার মাসে ১৩৪ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, স্থলবন্দরে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩৪ কোটি ৫ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। এই সময়ে বন্দর থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৩৬ কোটি ৬০ লাখ ৫৪ হাজার ২০০ টাকা। এর বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২০২ কোটি ৫৫ লাখ ১৫ হাজার ২০০ টাকা।

সেই হিসাবে ঘাটতি রয়েছে ১৩৪ কোটি ৫ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। এলসি সংকটের সমাধান এবং স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও দুই দেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে বিরাজমান সমস্যা সমাধান হলে রাজস্ব আদায় বাড়বে বলে দাবি আমদানি-রপ্তানিকারকদের।

শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরের তুলনায় ২০৮ কোটি ৫৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই বন্দরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১০৩৭ কোটি ৪০ লাখ ৩১ হাজার টাকা।

সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১৪২ কোটি ৩১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছিল। গত অর্থবছরে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ৮২৮ কোটি ৮৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল স্থলবন্দর কাস্টমস। এর বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৯৭১ কোটি ১৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা।

জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই মাসে বন্দর থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪১ কোটি ৬১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। এই মাসে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ঘাটতি ২০ কোটি ৫ লাখ ৮৩ হাজার। রাজস্ব ঘাটতির হার ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ। আগস্ট মাসে আদায় হয়েছে ৬৫ কোটি ৮৬ লাখ ১৪ হাজার ৮০০ টাকা, ঘাটতি ছিল ২৭ কোটি ৩৩ লাখ ০৫ হাজার টাকা। রাজস্ব ঘাটতির হার ৩৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

সেপ্টেম্বর মাসে আদায় হয়েছে ৪৫ কোটি ২৩ লাখ ৩৮ হাজার ৪০০ টাকা। ঘাটতি ছিল ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ৫২ হাজার টাকা এবং লক্ষ্যমাত্রার ৫৫ দশমিক ২০ শতাংশই ঘাটতি ছিল এই মাসে। চলতি অর্থবছরের চতুর্থ মাস অক্টোবরে রাজস্ব আদায় হয় ৪৯ কোটি ৮৪ লাখ ১৯ হাজার টাকা। ঘাটতি ছিল ৪১ কোটি ১৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৪৫ দশমিক ২০ শতাংশ।

সোনামসজিদ স্থলবন্দরের আমদানিকারক মো. নাসিম আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত কয়েক মাস থেকে বিভিন্ন কারণে এই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি কমে গেছে। সেটার প্রভাব পড়ছে সরকারের রাজস্ব খাতে। বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি ঠিকভাবে হলে রাজস্ব ঘাটতিতে পড়ত না। বন্দর দিয়ে স্বাভাবিকভাবে আমদানি-রপ্তানি শুরু হলে রাজস্ব ঘাটতি কমে আসবে।

সোনামসজিদ স্থলবন্দর পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের পোর্ট ম্যানেজার মাইনুল ইসলাম জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দর মূলত আমদানিনির্ভর বন্দর। তবে চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন কারণে আমদানির পরিমাণ কমেছে। ভারতে তাদের অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যাসহ নানা কারণে আমদানি কমতে পারে। চলতি মাসে গত ৪ মাসের তুলনায় অনেক বেশি পণ্য আমদানি কমেছে।

সোনামসজিদ স্থলবন্দর কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা দীপংকর দত্ত ঢাকা পোস্টকে বলেন, পণ্য আমদানি কমায় স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ে। দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব কম ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এই বন্দরে আমদানি কমেছে বলে আমাদের ধারণা। তবে অনুকূল পরিবেশ থাকলে আগামী কয়েক মাসে আমদানি বাড়লে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব বলে জানান তিনি।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...