সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের দুইদিন ব্যাপী নির্বাচনের শেষ দিনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ৯ প্লাটুন পুলিশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির আশপাশে অবস্থান নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও সদস্য সুপ্রিম কোর্টে আসার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তারা।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের দুইদিন ব্যাপী নির্বাচনের প্রথম দিনে ৩ হাজার ২৬১ জন আইনজীবী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। মোট ভোটার ৭ হাজার ৮৮৩ জন।
বৃহস্পতিবার সকালে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম মোর্শেদ ও আব্দুর রহিম বলেন, নির্বাচনে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে ৯ প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আরও পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
এদিকে নির্বাচনের শেষ দিন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনকে অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন বিএনপির প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। তিনি বলেন, এতো পুলিশ মোতায়েন করার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। গত দুই বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি এটা অশনি সংকেত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আইনজীবী বলেন, গতবার সুপ্রিম কোর্টে পুলিশের সাথে আইনজীবীদের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল। এবারও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ কারণে আমরা অস্বস্তিতে ভুগছি।
তবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান মনির বলেন, আইনজীবীদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বহিরাগতরা প্রবেশ করে যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে পুলিশ সেই দায়িত্ব পালন করবে।
এর আগে গতকাল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের দুইদিন ব্যাপী নির্বাচনের প্রথম দিনে ৩২৬১ জন আইনজীবী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। নির্বাচনে মোট ভোটার ৭ হাজার ৮৮৩ জন আইনজীবী।
ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্যে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের দুইদিন ব্যাপী নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয় গতকাল। সকাল ১০টা ২০ মিনিট থেকে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের মিলনায়তনে স্থাপিত ৫০টি বুথে এক যোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
মাঝখানে এক ঘণ্টার বিরতি দিয়ে বিকেল ৫টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। আজও একইভাবে ভোটগ্রহণ চলবে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল খায়েরের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের কমিটি নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। নির্বাচন পরিচালনায় উপ-কমিটিকে সহযোগিতা করছেন ১৫০ জন আইনজীবী।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট মো. ইকবাল করিম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান মনির বলেন, নির্বাচনের প্রথমদিন শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল ও বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল অংশগ্রহণ করেছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও কয়েকজন নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন— সভাপতি পদে আবু সাঈদ সাগর, সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক, দুই সহ-সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মোহাম্মদ আবু ওবায়েদ হোসেন সেতু, কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, দুটি সহ-সম্পাদক পদে হুমায়ুন কবির ও হুমায়ুন কবির পল্লব। সাতটি সদস্য পদে সৌমিত্র সরদার রনী, মো. খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, রাশেদুল হক খোকন, মাহমুদা আফরোজ, বেলাল হোসেন শাহীন, খালেদ মোশাররফ রিপন, রায়হান রনী।
বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে মনোনীত প্রার্থীরা হলেন— সভাপতি পদে এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক পদে মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল), দুই সহ-সভাপতি পদে মো. হুমায়ুন কবির মঞ্জু ও সরকার তাহমিনা বেগম সন্ধ্যা, কোষাধ্যক্ষ পদে মো. রেজাউল করিম, দুটি সহ-সম্পাদক পদে মাহফুজুর রহমান মিলন ও মো. আব্দুল করিম। সাতটি সদস্য পদে ফাতিমা আক্তার, সৈয়দ ফজলে এলাহি অভি, মো. শফিকুল ইসলাম শফিক, মো. রাসেল আহমেদ, মো. আশিকুজ্জামান নজরুল, মহিউদ্দিন হানিফ ও মো. ইব্রাহিম খলিল। এই দুই প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে ইউনুছ আলী আকন্দ এবং সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান নির্বাচন করছেন। এ ছাড়া সম্পাদক পদে সাদা ও নীল প্যানেলের বাইরে অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি ও ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়া প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। নাহিদ সুলতানা যুথি যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশের স্ত্রী। কোষাধ্যক্ষ পদে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন।